ঢাকা: ডিজিটাল হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে টাকা লেনদেনের অভিযোগে এমএফএস অপারেটর বিকাশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩০০ এজেন্টের সিম বন্ধ করেছে চট্টগ্রাম সিআইডি। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন ডিসট্রিবিউটরের লেনদেন কার্যক্রমে স্থগিত রেখেছে চট্টগ্রাম সিআইডি।
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলের বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান চালিয়ে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিআইডি। সিম বন্ধ করে দেওয়ার এই খবরের সত্যতা স্বীকার করেছেন বিকাশের চট্টগ্রাম বিভাগের একজন ডিস্টিবিউটর।
ডলারের দাম বাড়াতে প্রবাসী আয়ের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে হুন্ডির মাধ্যমে আসছে বলে সন্দেহ করছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও সন্দেহ করে সিআইডি। এই সূত্র ধরে তদন্ত শুরু করে সিআইডি জানতে পারে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে গত এক মাসেই এক হাজার কোটি টাকার ওপরে টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে এসেছে।
তদন্ত শুরুর পর বিকাশ এজেন্টদের এসব সিম বন্ধ করার ব্যবস্থা নিয়েছে সিআইডি। এই খবরের সত্যতা স্বীকার করে চট্টগ্রামের এক বিকাশ ডিস্টিবিউটর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘আমাদের বেশকিছু সিম বিকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। এসব সিমে আমাদের অনেক টাকাও আটকা পড়েছে।’
এই তদন্তে অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম হলেন সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক মামুন সালাম। যদিও এই প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ আসলে রাশেদ মঞ্জুর ফিরোজ নামে এক ব্যক্তির বলে সিআইডি সূ্ত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামেরই মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন ও প্রবাল করের মালিকানাধীন এসআই টেলিকম এবং আশফাক হোসেন কাদেরীর আল কাদেরী নামে প্রতিষ্ঠানগুলো অভিযুক্ত হয়েছে।
কুমিল্লা অঞ্চলের মধ্যে ফেনী সদরের বোনিতো কমিউনিকেশন্স ও মিয়ারকি করপোরেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজী কমিউনিকেশন্স এবং চৌদ্দগ্রামের আলমির এক্সপ্রেসের বিপক্ষে বড় ধরনের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে বিকাশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজোশের অভিযোগও পেয়েছে সিআইডি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণত একজন বিকাশ এজেন্টের দৈনিক লেনদেনে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউটে খুব বেশি হেরফের হয় না। অর্থাৎ ক্যাশ আউটের কাছাকাছি থাকে ক্যাশ ইনের টাকার পরিমাণ। কিন্তু অভিযুক্ত নম্বরগুলোয় অস্বাভাবিক হারে ক্যাশ ইন হয়েছে গত কিছুদিন ধরে। যেটির তদন্ত করতে নেমে সিআইডি এই বিষয়টি ধরতে পারে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় সবগুলো জেলায় বিভিন্ন এজেন্টের নম্বর সিআইডির তদন্তের প্রেক্ষিতে বিকাশ কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এ ক্ষেত্রে সিআইডি বিবেচনায় নিয়েছে, কোন এজেন্ট নম্বরগুলোতে অস্বাভাবিক পরিমাণে ক্যাশ ইন হচ্ছে। এই নম্বরগুলোতে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সিআইডি বেশ কিছুদিন ধরেই বিদেশ থেকে টাকা আনা ও পাচারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল কী ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে, তা নিয়ে তদন্ত করছিল। এর আগে তারা রিং আইডিসহ বেশ কিছু প্রতারকের মাধ্যমে অর্থ পাচার ও হুন্ডি হচ্ছে বলে জানিয়েছিল। সেই অর্থ এই দেশে তাদের এজেন্টরা লেনদেন করছিলেন বিকাশের মাধ্যমে। আর এটা নিশ্চিত হওয়ার পরই সিম বন্ধের ব্যবস্তা শুরু করে বিকাশ।
বিকাশের বন্ধ করা এজেন্ট সিম ও হুন্ডির মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে চট্টগ্রাম সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময় এসব বিষয়ে নজরদারি রাখি। ইদানীং বিকাশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা ৩০০টি নম্বর এবং চট্টগ্রাম ও আশপাশের বেশ কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটরের অ্যাকাউন্ট স্থগিত রেখেছি। অধিকতর তদন্তের পর এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’