অভ্যন্তরীণ চাহিদাপূরণ ও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবেঃ মাহবুবুল আলম
দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রি (সিসিসিআই) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)’র যৌথ উদ্যোগে “নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুটকী মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ও শিল্পস্থাপনে সহায়তাকরণ” শীর্ষক সেমিনার ১৬ অক্টোবর সকালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারস্থ বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আফতাব আলী শেখ’র সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি দি চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম, চেম্বার পরিচালকবৃন্দ মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন), অঞ্জন শেখর দাশ ও মোঃ রকিবুর রহমান (টুটুল), বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমেদ সুলেমান, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল সভাপতি মোঃ টিপু সুলতান শিকদার, মাসুদ ফিশ প্রসেসিং এন্ড আইস কমপ্লেক্স লিঃ’র এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর মোঃ আবদুল হাই, হিফস এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ’র সিইও সৈয়দ মুহাম্মদ শোয়েব হাসান, কেয়ার কেমিক্যালস’র চীফ কনসালট্যান্ট শ্যামল চৌধুরী, মেরিডিয়ান গ্রুপ’র ম্যানেজার (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) মোহাম্মদ কলিম উদ্দিন, রিভারেইন ফিশ এন্ড ফুড প্রসেসিং ইন্ডাঃ লিঃ’র ম্যানেজার শেখ মোকাম্মেল হক চৌধুরী ও বিডি সীফুড লিঃ’র এজিএম (অপারেশন্স) ফারুক উদ্দিন বক্তব্য রাখেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসিএসআইআর’র অধীনস্থ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার (আইটিটিআই)’র অফিসার ইনচার্জ এন্ড প্রজেক্ট ডাইরেক্টর রেজাউল করিম।
বিসিএসআইআর’র ডাইরেক্টর-চট্টগ্রাম ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, এসএসও ড. মোঃ রকিবুল হাসান, এসও জনাব এস. এম. রশিদুল ইসলাম ও মিশু আচার্য্যসহ চট্টগ্রামের সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন-বিসিএসআইআর’র মতো এ ধরণের বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্ভাবিত জনপ্রিয় খাদ্য শুটকী মাছ প্রক্রিয়াকরণ প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সাগর উপকূলবর্তী দেশসমূহে শুটকী মাছ অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার। আমাদের দেশে প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির সমস্যার কারণে এ খাদ্য বিষয়ে ভোক্তাদের আগ্রহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও বিজ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে এসডিজি অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেখানে নিরাপদ খাদ্য অন্তর্ভূক্ত। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ। বঙ্গোপসাগরে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন এবং প্রজননকালে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নসহ সরকারি বিভিন্ন নীতিমালার কারণে বাংলাদেশে মাছের প্রজনন ও মাছ আহরণের সুযোগ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনাও সৃষ্টি হয়েছে। শুটকীকরণ প্রক্রিয়ার ত্রুটির কারণে বিশেষ করে বিভিন্ন কেমিক্যাল ব্যবহারের ফলে এ মাছের স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে এবং আমদানির পরিমাণ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের শুটকী মাছের পুষ্টিগুণ ও স্বাদ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হলে স্থানীয় চাহিদা মেটানো ও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে এই শিল্প স্থাপনে রোডম্যাপ তৈরির আহবান জানান।
বিসিএসআইআর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ আফতাব আলী শেখ বলেন-বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে প্রযুক্তি উদ্ভাবনপূর্বক নতুন নতুন পণ্য তৈরীতে সহায়তা করা এবং জনসেবায় তা নিয়োজিত করা বিসিএসআইআর’র মূল কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় শুটকী মাছ উৎপাদনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ড্রায়ার উদ্ভাবন করা হয়েছে। আমাদের দেশে শুষ্ক মৌসুমে প্রাকৃতিক উপায়ে শুটকী প্রক্রিয়া করা হলেও বর্ষা মৌসুমে অনেক মাছ নষ্ট হয়ে যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুটকী মাছের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই দেশীয় চাহিদাপূরণ ও আমদানির সুযোগ সৃষ্টিতে পুষ্টিগুণসম্পন্ন কেমিক্যালমুক্ত শুটকী মাছ উৎপাদনে বিসিএসআইআর এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। তিনি এ শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেমিনারে অন্যান্য বক্তারা এ শিল্প স্থাপনে সরকারি অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজীকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ, অর্থায়ন সুবিধা নিশ্চিত করা, বিদ্যুতের পাশাপাশি ডুয়েল ফুয়েল সিস্টেম বিবেচনা করা এবং মাছের সেল্ফ লাইফ দীর্ঘায়িত করার উপর গুরত্বারোপ করেন।
চেম্বার পরিচালক মোঃ অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) বর্তমানে ফ্রোজেন ফুড ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুমতি দেয়া হলে এ ধরণের মেশিন স্থাপন করে শুটকী প্রক্রিয়াকরণ ব্যবসা শুরু করা সম্ভাবনাময় হবে উল্লেখ করে এক্ষেত্রে সহযোগিতার অনুরোধ জানান।
অঞ্জন শেখর দাশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি দেশের উদাহরণ দিয়ে ক্যান্ড ফুড এর সম্ভাবনা তুলে ধরে পর্যাপ্ত গবেষণার আহবান জানান। মোঃ রকিবুর রহমান (টুটুল) সাগরে আহরণকৃত মাছের প্রায় ৬০% নষ্ট হয় উল্লেখ করে তা সংরক্ষণে ব্যবস্থা করা এবং মান নিশ্চিতকরণে প্রক্রিয়াকৃত শুটকী মাছে ফুড ভেল্যু চার্ট সংযুক্ত করার অনুরোধ জানান।