মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অর্থনীতির বর্তমান উত্তরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
তিনি বলেছেন, বিশ্ব ব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তারা যখন কোনো দেশ সম্পর্কে বা কোনো বিষয় নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করে, সঙ্গত কারণে এটি সবাইকে প্রভাবিত করতে পারে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধির হার (জিডিপি) নিয়ে বিশ্বব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে তা বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান উত্তরণের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন।
শুক্রবার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব বলেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের জিডিপি সম্পর্কে তারা (বিশ্ব ব্যাংক) এবার যে নম্বরগুলো বলেছেন, সেগুলো করোনার প্রভাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি শ্লথ হওয়ার শুরু থেকেই বলে আসছে। সেই একই জায়গাতে তারা এখনও আছে। আমাদের অর্থবছরের তিন মাস পার হয়ে গেছে, এখনও নয় মাস সময় আছে। করোনার প্রভাবে যে শ্লথ গতি অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছিল সেটি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক।
আরও বলেন, স্বাস্থ্য ও মহামারি পরিচালন ব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে, দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, অভ্যন্তরীণ বেসরকারি-সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ, রফতানি এবং রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জিডিপিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। করোনা মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
জিডিপি নিয়ে করা প্রতিবেদন প্রসঙ্গে মুস্তফা কামাল আরও বলেন, আমরা সকলেই জানি যে, তাদের (বিশ্ব ব্যাংক) প্রক্ষেপণের বৈশিষ্ট্যই হলো অত্যন্ত রক্ষণশীল পদ্ধতি। বিশ্ব ব্যাংকের এ যাবৎ সব প্রক্ষেপণ যদি কেউ একটি তালিকা করে তাহলে দেখা যাবে যে, তারা যে প্রক্ষেপণগুলো করে তা বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। আমরা বিশ্বাস করি যে, তারা এবারও সেই গতানুগতিক ধারার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। আমরা আমাদের সক্ষমতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি এবং তা অর্জন করি। অর্জন করে বারবার প্রমাণ করতে হয়, আমরাই সঠিক। এবারও আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রমাণ করব যে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রাই সঠিক।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স বাড়লেও এটি সাময়িক মনে করছেন অনেকে। বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোকে উৎসাহিত করার জন্য আমরা যখন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি তখন অনেকেই বলেছিল, রেমিট্যান্সের কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, প্রণোদনার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
আরো বলা হয়, ‘তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কারণ করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমার ভাই-বোনেরা ফিরে আসছেন, তারা সবকিছু বিক্রি করে চলে এসেছেন, কাজেই এই প্রবৃদ্ধি। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং রেমিট্যান্স পাঠানোর নিয়ম-কানুন সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কথা। করোনা আসার আগে থেকেই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের শুরু থেকেই, যখন করোনা ছিল না, রেমিট্যান্স প্রবাহে ছিল ঊর্ধ্বগতি, তাই আগামীতে এ ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে— এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়।
মন্ত্রী বলেন, ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্বোধনী অনু্ষ্ঠানে বিতর্কের মধ্যেই আহ্বান জানিয়েছিলাম যে, ‘ও পৃথিবী, এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে। ও পৃথিবী, তোমায় জানাই স্বাগতম এই দিনে।’ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অর্জন নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক দেখে এখনও আবার সংশ্লিষ্টদের বলতে ইচ্ছা করে যে, আসুন চিনে নিন এক অন্যরকম নতুন বাংলাদেশ।’
দেশবাসীর উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, বারবার আমরা বলেছি, এ দেশের জনগণ এ দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি, তারাই আবার প্রমাণ করবে যে, বিশ্বব্যাংক যে প্রক্ষেপণ করেছে তা সামঞ্জস্যহীন। সাহসী বাঙালি জাতি অতীতেও বারবার প্রমাণ করেছেন, এবারও করবে। আমরা সবাই অবগত যে, আমরা সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করছি। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে দেশের মানুষের জন্য তিনি বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ বা রূপরেখা দিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি সবাই মিলে আমরা তা অর্জনে সক্ষম হব।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, গত ১০ বছর বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সকলের উপরে ছিল, আমরা আত্মপ্রত্যয়ী যে, ভবিষ্যতেও সে ধারা বজায় থাকবে।