Home First Lead বেশভূষা পরিবর্তন করে পালাতে চেয়েছিল আশিক

বেশভূষা পরিবর্তন করে পালাতে চেয়েছিল আশিক

শিকুল চক্র হোটেল ম্যানেজারদের যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলতো

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা ও প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলাম (২৯)-কে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ধর্ষণকাণ্ডের ২ দিন পর বেশভূষা পরিবর্তন করে কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার হয় আশিকুল।

মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আশিকুলকে

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৮ ও ১৫ অভিযান চালিয়ে রবিবার দিবাগত রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে আশিকুলকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশিকুল ধর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করেছে।

র‌্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আশিকুল কক্সবাজারের পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০-৩৫ জন। তিনি ২০১২ সাল থেকে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত, ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন।

আশিকুলের চক্র পর্যটন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। হোটেলে ম্যানেজারদের যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করত তারা।

আলোচিত ধর্ষণকাণ্ড সম্পর্কে আশিকুল জানায়, তারা ভিকটিম ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে লাবণি বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ভুক্তভোগীকে সিএনজি চালিত অটো রিকশায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রেখে ওই নারীর স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর ভিকটিমকে হোটেলে আটকে রেখে বের হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে আশিকুল আত্মগোপনে চলে যায়।

ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে র‌্যাব কমান্ডার বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ অর্থ সংকুলানের আশায় কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট হতে অর্থ সাহায্য চাইত।

গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হন ওই নারী। পরদিন তার স্বামী বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও আরও ২-৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।

ভিকটিমের স্বামী র‌্যাব-১৫ এর কাছে সহায়তা চাইলে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে উদ্ধার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৩ ডিসেম্বর রাতে আশিকুল ও তার চক্রকে সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

আশিকুল সম্পর্কে র‌্যাব আরও জানায়, তিনি সুগন্ধা এলাকায় ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রে বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করতেন।  ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল ও চাঁদা দাবির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আশিকুলের চক্রের সদস্যরা রাতের বেলায় সৈকতে আগত পর্যটকদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতো। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করে অর্থ আদায় করত।

আশিকুলের নামে ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে সে ৫ বার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে।