বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বিশ্ব উষ্ণায়ণের থাবা একেবারে জাঁকিয়েই বসেছে। একটু একটু করে বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে শুরু করে দিয়েছে। তাপমাত্রা যত বাড়ছে ততই বিশাল বিশাল হিমবাহে ফাটল ধরছে। ভেঙে যাচ্ছে মেরুপ্রদেশের হিমশৈল। বরফ গলে জল হয়ে সমুদ্রের জলস্তর বাড়াচ্ছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের গবেষণা চমকে দেওয়ার মতোই খবর শুনিয়েছে। সেই ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০১৭ সাল অবধি গত ২৩ বছরে প্রায় ২৮ লক্ষ কোটি টন বরফ উধাও হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।
ইংল্যান্ডের লিডস ইউনিভার্সিটির পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। গবেষকরা বলছেন, রেকর্ড হারে বরফ গলছে মেরু অঞ্চলগুলিতে। বিশেষত গত কয়েক বছরে গ্রিনল্যান্ডে বড় বড় বরফের চাঁই অদৃশ্য হয়েছে। যার মানেই হল সেইসব হিমশৈল গলে সমুদ্রে মিশে গেছে। যার ফলে সমুদ্রের জলস্তরও বেড়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বরফ গলার হার যত বাড়বে, তত বাড়বে পৃথিবীর উষ্ণতা। আর তত দ্রুত গতিতে গলতে থাকবে বরফ। অর্থাৎ গোটাটা চক্রবৃদ্ধিহারে এগোতে থাকবে।
কীভাবে উধাও হচ্ছে বরফ?
বিজ্ঞানীরা অঙ্ক কষে দেখেছেন, ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল অবধি প্রতি বছরে ৮০ হাজার কোটি টন করে বরফ গলেছে। ২০০০ সালের পর থেকে উষ্ণায়ণের প্রকোপ বাড়ায় আরও বেশি হারে বরফ গলতে শুরু করেছে পৃথিবীতে। ২০১৭ সাল অবধি বছরে গড়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টন করে বরফ গলেছে। চমকে দেওয়ার মতো ব্যাপার আরও আছে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, রেকর্ড হারে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলতে শুরু করেছে। উত্তর গোলার্ধের এই বিশাল দ্বীপ পুরু বরফের স্তরে ঢাকা। তাই একে হোয়াইটল্যান্ডও বলে। জলবায়ু বদলের ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে এই গ্রিনল্যান্ডে। তাপমাত্রা বাড়ায় বিশাল বিশাল বরফের চাঁই গলে সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে। দেখা গেছে, ২০১৯ সালের পর থেকে প্রতি মিনিটে দশ লক্ষ টন করে বরফ গলছে গ্রিনল্যান্ডে।
এই হিমবাহ গলনের ভয়ানক পরিস্থিতি কিছুদিন আগেই দেখা গিয়েছে। আন্টার্কটিকার বিশাল হিমবাহ থেকে খসে পড়া দানবাকৃতি হিমশৈল ভাসতে ভাসতে এখন প্রায় সাউথ জর্জিয়া দ্বীপের কাছে এসে পড়েছে। ন্যাশনাল আইস সেস্টারের গবেষকরা বলছেন, যে কোনও সময় দ্বীপের পূর্ব দিকে ধাক্কা মারতে পারে এই হিমশৈল। যদি ধাক্কা লাগে তাহলে ওই অংশ ভেঙে সমুদ্রে ডুবে যাবে। দ্বীপের ওই অংশেই পেঙ্গুইন, শিলেদর বসতি রয়েছে। সামুদ্রিক পাখি অ্যালবাট্রস দেখা যায় এই দ্বীপে। বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল সাউথ জর্জিয়া ও সাউথ স্যান্ডউইচ আইল্যান্ডকে ‘ইমপরট্যান্ট বার্ড এরিয়াস’ বলে উল্লেখ করেছে। সুতরাং কী বিপদ ঘনিয়ে আসছে তা বলাই বাহুল্য।
বরফ গলছে, সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বাড়ছে
গবেষকদের কথায়, সাদা রঙের কারণে বরফ ব্যাপক পরিমাণে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়। সাধারণত যে আলো এবং তাপ পৃথিবীতে ঢোকে, বরফে প্রতিফলিত হয়ে তার অনেকটাই আবার মহাকাশে ফিরে যায়। কিন্তু যদি এই বরফ গলতে থাকে তাহলে তার তলায় থাকা সমুদ্রের জল ও মাটি সেই তাপ শুষে নেবে। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমে বেড়ে যাবে। বরফের তলার মাটি যতটা না তাপ শুষে তেতে উঠবে, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ তাপ সমুদ্রের জলতে উত্তপ্ত করবে। ফলে জলের তাপমাত্রা হু হু করে বাড়তে থাকবে। আর জলের তাপমাত্রা বাড়লে জলতলও বাড়বে। ফলে অদূর ভবিষ্যতে উপকূলবর্তী এলাকা আরও বেশি করে ডুবতে থাকবে। এখনই পশ্চিম আন্টার্কটিকায় উপকূল বরাবর দুই বিশাল হিমবাহেও ভাঙন ধরেছে। বিশাল দুই হিমবাহ পুরোপুরি গলতে শুরু করলে সমুদ্রের জলস্তর ৫ শতাংশ অবধি বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি গ্রিনল্যান্ডের হিমবাহ সম্পূর্ণ গলে যায়, তাতে গোটা পৃথিবীতে সমুদ্রের জলস্তর গড়ে ২৩ ফুট বাড়বে। ২০১২ সালে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সে বছর তাপমাত্রা ছুঁয়েছিল ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমবাহের চাদর গলতে শুরু করেছিল। উষ্ণতম আন্টার্কটিকা দেখা গিয়েছিল সেই ১৯৬১ সালে। তারপর ২০১৫-তে ফের উষ্ণতা বাড়ে। চলতি বছরের মার্চে তাপমাত্রার পারদ ছাড়ায় ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষকদের কথায়, ১৯৮০ সালের পর থেকে জলবায়ু ও সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা যথাক্রমে ০.২৬ ও ০.১২ ডিগ্রি হারে বেড়ে চলেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ণ যে হারে বাড়ছে তাতে আর ৮০ বছরের মধ্যেই মেরুপ্রদেশের এক-তৃতীয়াংশ বরফ পুরোপুরি গলে যাবে।