Home আন্তর্জাতিক ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তালিবান শীর্ষ নেতা

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তালিবান শীর্ষ নেতা

ছবি সংগৃহীত

তালিবানের সাথে দোহায় ভারতের আলোচনা

বিজনেসটুডে ২৪ ডেস্ক

মঙ্গলবার তালিবানেরসঙ্গে সরকারি ভাবে আলোচনা শুরু করল ভারত । ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় তা আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণাও করেছে। কিন্তু যাঁর সঙ্গে এই বৈঠক হল, তাঁর কাহিনীই চমকে দেওয়ার মত।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার পর্ব শেষ হয়েছে। তার পরই মঙ্গলবার দোহায় তালিবান শীর্ষ নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন কাতারে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তল। তালিবানের ওই শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা হলেন মহম্মদ আব্বাস স্টানেকজাই । দোহায় ভারতীয় দূতাবাসে হয় সেই বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের জন্য তালিবান নেতৃত্বই আগ্রহ প্রকাশ করেছিল।

এই মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানকাজিই একদা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। নওগাঁওয়ের আর্মি কলেজে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন স্ট্যানকাজি। প্রথমে একজন জওয়ান হিসাবে প্রশিক্ষণ নেন তিনি। তার পর দেরাদুনে ভারতীয় মিলিটারি আকাডেমিতে অফিসার হিসাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন মহম্মদ আব্বাস।

তালিবানের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, তাদের নাশকতার কথা অজানা নয়। সেই তালিবান শিবিরে মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানকাজি এক বিরল চরিত্র। চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন। অতীতে আফগানিস্তান যখন তালিবান দখলে ছিল তখন উপ বিদেশমন্ত্রী ছিলেন তিনি। সেই সুবাদে গোটা দুনিয়া ঘুরেছেন। এমনকি ৯৬ সালে বিল ক্লিন্টন প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন তিনি। উদ্দেশ্য ছিল, তালিবান সরকারকে যাতে মার্কিন প্রশাসন স্বীকৃতি দেয়, সেই অঙ্গীকার আদায় করে নেওয়া। স্ট্যানকাজির সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি। পরে প্রতিনিধি দল নিয়ে একবার চিন সফরেও গিয়েছিলেন মহম্মদ আব্বাস।

সাউথ ব্লকের কর্তারা জানাচ্ছেন, বর্তমান তালিবান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অন্যতম শীর্ষ রাজনীতিক ও কূটনীতিক হলেন মহম্মদ আব্বাস। তাঁর সঙ্গে নয়াদিল্লির ট্র্যাক টু আলোচনা চলছিলই। মঙ্গলবার দোহার বৈঠককে সরকারি ভাবে স্বীকার করল নয়াদিল্লি।

আফগানিস্তান তালিবান দখলে চলে যাওয়ার পর থেকেই নয়াদিল্লি একটি বিষয়ে গোড়া থেকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তা হল আফগানিস্তানে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা যাতে সুনিশ্চিত থাকে। মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, এদিন দোহায় তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনাতেও সে কথাটাই স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আফগান নাগরিক, বিশেষ করে সেখানকার যে সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় নিতে চান তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কথাও বৈঠকে উত্থাপন করেছেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত।

এর পরই সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নয়াদিল্লির উদ্বেগের কথা তালিবান নেতাকে জানিয়েছেন দীপক মিত্তল। নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়েছে, আফগানিস্তানের মাটি যাতে কোনওভাবেই ভারত বিরোধী সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জন্য ব্যবহৃত না হয়। বিদেশ মন্ত্রকের দাবি, তালিবান প্রতিনিধি নয়াদিল্লির এই সব উদ্বেগ নিরসনের ব্যাপারে সদর্থক ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আফগানিস্তান তালিবানদের দখলে চলে যাওয়ার পর থেকে খুবই সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলছে নয়াদিল্লি। এ ব্যাপারে আমেরিকা, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সহ সহযোগী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গেও নিরন্তর আলোচনা চালাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ঘরোয়া আলোচনায় বলা হয়েছে, তালিবানদের উত্থানের কারণে উপমহাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে ঠিকই। তবে কোনও তাড়াহুড়ো করতে চায় না ভারত। আফগানিস্তানে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে সুচিন্তিত ভাবে কৌশলগত পদক্ষেপ করতে চায়।