Home Third Lead ভোলায় জেলে পল্লীতে হাহাকার 

ভোলায় জেলে পল্লীতে হাহাকার 

নিষেধাজ্ঞার ১০ দিনেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি চাল
  • দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের কাছ থেকে এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন জেলে নিবন্ধন চলমান রয়েছে। যেসব জেলেদের নিবন্ধন নেই, তাদের অফিসে এসে নিবন্ধন করে নিতে বলা হয়েছে।
ভোলা থেকে মহিউদ্দিন: ভোলায় ইলিশের আভয়াশ্রমের কারণে দুই মাসের জন্য মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে সরকারি বরাদ্দ থেকে চাল বিতরণের নির্দেশনা রয়েছে। তবে নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন পার হতে চললেও ভোলার জেলেদের ভাগ্যে জোটেনি সেই চাল।
 সরেজমিনে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাচীনকাল থেকেই মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন ভোলার প্রায় ৩ লাখ জেলে। ইলিশের আভয়াশ্রম হওয়ায় ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ভোলার ইলিশা থেকে চর পিয়ালের শাহবাজপুর চ্যানেলে মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার এবং ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ইলিশসহ সব ধরনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। এর ফলে নদীতে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছেন জেলেরা। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ১০ দিন পার হতে চললেও জেলেদের ভাগ্যে মেলেনি সরকারি বরাদ্দের চাল।
অন্যদিকে, এসময়েও ভোলার জেলেদের কাছ থেকে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তি আদায় চলমান থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। জেলেরা বলছেন, এখনো সরকারি বরাদ্দের চাল না পাওয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খুব কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের।
 ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জেলে মো. নিরব মাঝি বলেন, ‘সরকার মাছ ধরার ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দিছে। আমরা গত ১০ দিন ধরে নিষেধাজ্ঞা পালন করে নদীতে মাছ ধরতে যাই না। কিন্তু আমাদের নামে সরকার যে চাল বরাদ্দ করছে তা এখনো পাইনি। তিনি আরও বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো আয়-রোজগার নাই। ঘরে বউ ছেলে-মেয়ে আছে, কিন্তু ঘরে আজ চাল নাই। আড়তদারের থেকে টাকা ধার করে ২ কেজি চাল কিনছি। কবে সরকারি চাল পাবো সে অপেক্ষায় আছি। খুবই কষ্টে দিন কাটাইতেছি।
 একই এলাকার বাসিন্দা জেলে মো. আকবর আলী মাঝি জানান, তিনি গত ৪০-৪৫ বছর ধরে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের তালিকায় তার নাম ওঠেনি। যে কারণে জেলেদের নামে বরাদ্দের চাল তিনি পান না।
 মো. রুবেল মাঝি বলেন, ‘আমি জেলে। মাছ ধরার কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ জানি না। জেলের কাজ করতে গিয়ে তিনটা এনজিওর থেকে ঋণ নিয়েছি। প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকা কিস্তি চালাইতে হয়। কিন্তু দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা চলায় নদীতে গিয়া মাছ ধরতে পারি না। এখন কিস্তি চালাবো কেমন করে।সরকার তো দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ করে নাই। তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাসের জন্য এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ না থাকলে কিস্তি পরিশোধের জন্য পালিয়ে নদীতে মাছ ধরতে যাবো।
 ভোলা সদরের ভোলার খাল মৎস্য ঘাটের আড়তদার মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেদের পাশাপাশি আমরা মৎস্য আড়তদাররাও বিপাকে আছি। জেলেরা সরকারি চাল এখনো পায়নি। যার কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলে তাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়ে বলে ঘরে চাল নাই, টাকা ধার দেন বা দাদন দেন চাল কিনে খাবো। এখন আমাদের কষ্ট হলেও জেলেদের টাকা দিতে হচ্ছে। তবে সরকারি চালটা যদি জেলেরা ১/২ দিনের মধ্যে পায় তাহলে তাদের কষ্ট দূর হবে।
 ভোলা সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন বলেন, জেলেদের নামে বরাদ্দের চাল দ্রুত বিতরণের জন্য আমরা বলেছি। আশা করি আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের কাছ থেকে এনজিওর কিস্তি আদায় বন্ধ রাখতে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন জেলে নিবন্ধন চলমান রয়েছে। যেসব জেলেদের নিবন্ধন নেই, তাদের অফিসে এসে নিবন্ধন করে নিতে বলা হয়েছে।
 খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার সাত উপজেলায় প্রায় ৩ লাখ জেলে থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি নিবন্ধিত জেলে আছেন প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার। তাদের মধ্যে এবছর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞায় সরকারি চাল পাবেন ৯২ হাজার ৬৬১ জন জেলে।