বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানির কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, পাওয়া গেলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থনৈতিক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে রোববার (২৩ জানুয়ারি) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এফবিসিসিআই’র সাম্প্রতিক সভায় মাঠ পর্যায়ের ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
রোনাভাইরাস মহামারীতে ব্যবসায়িক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের আর্থিক প্রণোদনার সুবিধা সবাই পাবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দিনি বলেন, ‘আমরা যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি যোগ্য সব ব্যবসায়ী তা পাবেন। যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে সেগুলো পূরণ করতে পারলে অবশ্যই তাদের প্রণোদনা দেয়া হবে। আমি মনে করি এটা নিয়ে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে তার নিরসন হবে।’ প্রণোদনা পাওয়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি এ সুবিধা না পান তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, আবারও গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়ছে, সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে, মূল্যস্ফীতিও বাড়ছে। এ অবস্থা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ঠিক হবে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দাম বাড়ানো হয়নি। আমার দিক থেকে দাম বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমি বিষয়টি এখনও জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে পারব। আমাদের সরকার জনগণের সরকার। এ দেশের সব জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে হবে। আমি মনে করি চলার পথ কখনও বিঘ্নিত হবে না। আমরা এগিয়ে যাব।’
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত বাড়ছে। প্রতিদিনই বাড়ছে শনাক্ত ও মৃত্যু। তবে এ বিষয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ’ওমিক্রন নিয়ে যতটা ভয় হচ্ছে, ততটা ভয়ের কারণ নেই। আগে যেভাবে আমরা মোকাবিলা করেছি তেমনিভাবে এবারও মোকাবিলা করতে পারব।’
রবিবার মন্ত্রিসভা কমিটি পাঁচ ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ৭৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি থেকে ব্যয় হবে ১ হাজার ৭০ কোটি ৭১ লাখ ১৮ হাজার ১৯৫ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক ঋণ ৭ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার ৭০০ টাকা।
সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভা শেষে অনুমোদিত প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য পাঁচটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি, সেতু বিভাগের একটি, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি এবং জননিরাপত্তা বিভাগের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির সভায় পাঁচটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘শরীয়তপুর জেলার জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলায় পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর ডিপিএম-০১ এর ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের জন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সঙ্গে ১ হাজার ৭৭ কোটি ৫৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩৬৮ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। সে অনুসারে মাঠ পর্যায়ে পূর্ত কাজ চলমানকালে কিছু আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি এবং নতুন কিছু আইটেম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ২৪৯ কোটি ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯১ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।’
তিনি বলেন, ‘শরিয়তপুর-জাজিরা-নওডোবা (পদ্মা ব্রিজ সংযোগ সড়ক) উন্নয়ন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর-ডব্লিউপি-০১ এর পূর্ত কাজ ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ৬টি দরপত্র জমা পড়ে। সবগুলো দরপত্রই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমেদ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এজন্য ব্যয় হবে ১২৪ কোটি ৮২ লাখ ৩০ হাজার ৫৫৯ টাকা।’
সভায় ‘কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কে পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ৩টি প্রাক-যোগ্যতা সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। সবগুলো দরপ্রস্তাবই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান স্যামওয়ান এবং মীর আখতার যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পে ব্যয় হবে ৬৪০ কোটি ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার ৮৪৫ টাকা।
সভায় ‘মডার্ন ফুড স্টোরেজ ফ্যাসিলিটিজ প্রজেক্ট’-এর আওতায় আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণকাজে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সাইলো নির্মাণকাজে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োজিত গ্যানিকো ফ্রান্সের সঙ্গে বর্ধিত চুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখ শেষ হয়। যার সংশোধিত চুক্তিমূল্য ছিল ৪৪ কোটি ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৭৪ টাকা। স্টিল সাইলো নির্মাণকাজ চলমান থাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মেয়াদ ৫ মাস বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ৭ কোটি ৬৮ লাখ ২০ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সামসুল আরেফিন আরও বলেন, ‘ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের জন্য ‘ভেহিকেল মাউন্টেড ডাটা ইন্টারসেপ্টর (ভিওআইপি) অ্যান্ড রিলেটেড সার্ভিসেস’ ক্রয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে আমেরিকার মোবাইলিয়াম ইনকরপোরেশনের কাছ থেকে ভিওআইপিটি কেনা হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা।’