তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় কমছে। গত ৫ মাস ধরে নিম্নমুখী। আমদানিকারকদের আগ্রহ বেড়ে গেছে ভিয়েতনামের প্রতি।
পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা জানান, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পখাত এখন চরম দুঃসময় কাটাচ্ছে। অসম ও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় রপ্তানিমূল্যও প্রতিনিয়ত কমছে। একারণে রপ্তানিবাণিজ্যে ৮৪ শতাংশ অবদান রক্ষাকারী সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক শিল্প খাতে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অন্যদিকে, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং পরিবহন খরচ বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। কিন্তু পণ্যের দাম সে তুলনায় বাড়েনি, উল্টো কমেছে। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ হয়ে প্রতিনিয়ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা। গত পাঁচ বছরে বন্ধ হয়েছে অন্তত ১ হাজার ৩০০ কারখানা। এতে কর্মহীন হয়ে পড়ছেন লাখ লাখ শ্রমিক। নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে রপ্তানি আয়ে।
চীনের পরই একক দেশ হিসেবে পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ স্থানে আছে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম। বাংলাদেশ ৩ হাজার ২৯২ কোটি এবং ভিয়েতনাম ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। উভয় দেশের পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। গত বছর ১০ শীর্ষ রপ্তানিকারকের মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি ছিল ৬.৪ শতাংশ। অন্যদিকে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়ে হয়েছে ৬.২ শতাংশ।
সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংক প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাবার অন্যতম কারণ হচ্ছে লিড টাইম (পণ্য সরবরাহের সময়সূচি) বেশি হওয়া, ডলারের বিপরীতে টাকার উচ্চমান এবং বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাব্য পরিণতি মোকাবিলায় চীনা উদ্যোক্তাদের কারখানা ভিয়েতনামে স্থানান্তর। অপরদিকে, পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে ভিয়েতনামের লিড টাইম কম হওয়া, উন্নত অবকাঠামো, ভালো বন্দর সুবিধা, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার সক্ষমতার কারণেও উদ্যোক্তাদের আগ্রহ ভিয়েতনামের প্রতি বেড়েছে। এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ইউরোপ অঞ্চলের দেশগুলোতে এখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজার তুলনামূলক ভালো হলেও আমরা সেভাবে কাজে লাগাতে পারছি না। এ কারণে আমাদের দেশে রপ্তানিতে বিপর্যয় নেমেছে। ভারত, পাকিস্তানসহ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের নিজস্ব মুদ্রার সঙ্গে ডলারের ডিভ্যালুয়েশন করেছে। কিন্তু আমাদের মুদ্রা তথা টাকার সঙ্গে ডলারের ডিভ্যালুয়েশন হচ্ছে না। ফলে আমরা প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছি। আমাদের অর্ডার কমে যাচ্ছে।
বছরের প্রথম ৯ মাসে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভিয়েতনাম। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৬১০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে, একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৩০ কোটি ডলারের পোশাক। অর্থাৎ ৯ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম ৩২০ কোটি ডলারের পোশাক বেশি রপ্তানি করেছে
বিজিএমইএ জানায়, তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ প্রতি বছর গড়ে ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে। গত ৫ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বিপরীতে উৎপাদিত পণ্যের দাম না বেড়ে প্রতিনিয়ত কমছে। এ সময়ে প্রধান রপ্তানি বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী পোশাকের দরপতন হয়েছে ৭ শতাংশের বেশি। ইউরোপে দরপতন হয়েছে ৩.৬৪ শতাংশ।
বিজিএমইএ একজন পরিচালক বলেন, আমরা যে অর্ডার হারাচ্ছি তা সত্য। মিয়ানমার গত বছর ১০ বিলিয়ন ডলার পোশাক রপ্তানি করেছে। তার আগের বছর রপ্তানি করেছে ৪ বিলিয়ন ডলারের। এই ব্যবসা বাংলাদেশ থেকেই গেছে।