Home Second Lead ময়মনসিংহে পুঁজি হারাচ্ছে হ্যাচারি মালিকরা

ময়মনসিংহে পুঁজি হারাচ্ছে হ্যাচারি মালিকরা

ময়মনসিংহ থেকে তাপস কর: করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে হ্যাচারি শিল্পে। পুঁজিহারা হচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

ত্রিশাল উপজেলার ধলা গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান,তিনি এশিয়া সায়েন্টিফিক ফিস হ্যাচারি অ্যান্ড নার্সারির স্বত্বাধিকারী। প্রতিদিনই হ্যাচারির পুকুরে রেণু পোনা ও মাছের জন্য খাবার দিতে হচ্ছে রফিকুলকে। কিন্তু ক্রেতার অভাবে পোনা ও মাছ কোনোটাই বিক্রি করতে পারছেন না। পুকুরে রেণু বড় হয়ে পোনায় পরিণত হচ্ছে। এখন তিনি বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন।

রফিকুল ইসলামের মতো ময়মনসিংহ জেলার অর্ধলাখের বেশি হ্যাচারিমালিক ও মৎস্যচাষি এমন বিপাকে পড়েছেন। চলমান লকডাউনে জেলায় মাছের চাহিদা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা না আসায় পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটছে তাঁদের।

জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাবমতে, ইতিমধ্যে জেলার প্রায় ৫৮ হাজার ৪ শ ৬৭ মৎস্যচাষির ৩ শ ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

জেলায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার মাছচাষি রয়েছেন। হ্যাচারি রয়েছে ৩ শ ১৭টি। প্রতিবছর ১ লাখ ৮০ হাজার কেজি পোনা এবং প্রায় ৪ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়। তবে জেলায় মাছের চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন । উৎপাদিত পোনামাছ অবিক্রীত থাকায় অর্ধেক মূল্যেও বিক্রি করা যাচ্ছে না মাছ। দেড় বছরের ব্যবধানে পোনামাছ উৎপাদন কমে অর্ধেকে নেমে গেছে বলে দাবি হ্যাচারিমালিকদের। 

মাছ কেনার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা গণপরিবহন যোগেই আসতেন। এরপর যাচাই করে মাছ কিনে নিয়ে যেতেন। কিন্তু করোনার কারণে এলাকায় এমন ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কমে গেছে। দু’একজন এলেও পোনা কিনছেন স্বল্প পরিমাণে।

পোনা অর্ধেক মূল্যেও বিক্রি করা যাচ্ছ না। কিন্তু মৌসুম চলে যাচ্ছে। সদর উপজেলার বয়রা গ্রামের মৎস্যচাষি রুবেল মিয়া জানান, শিক্ষা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরাঞ্চলে মাছের চাহিদা কমে যাওয়ায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। করোনার আগে শিং ও মাগুর মাছ ১৬ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা মণ দরে বেচাকেনা হতো। এখন ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা মণ দরেও ক্রেতা মেলে না। গত দেড় বছরে লোকসান গুনতে গুনতে তাঁর মতো অনেকেই পুঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম।

ভাই ভাই মৎস্য হ্যাচারি ও নার্সারির জুয়েল মিয়া বলছেন, ‘করোনার আগে পাঁচ কোটি পোনামাছ উৎপাদন ও বিক্রি করতাম। এ বছর দুই কোটির কম পোনা উৎপাদন করেছি। 

ত্রিশালের ধলা গ্রামের ক্ষুদ্র মৎস্যচাষি, ফড়িয়া ও শ্রমিকেরা জানায়, দিনের পর দিন গণপরিবহন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়ায় রেণু পোনা ও পোনামাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত হাজারো শ্রমিক, ফড়িয়া, ক্ষুদ্র চাষি ও ব্যবসায়ী এখন বেকার হয়ে পড়েছেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা বলেন, যথা সময়ে মাছ বিক্রি করতে না পারায় সরকারি হিসাবেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ শ ৫ কোটি টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ৫৮ হাজার ৪৬৭ জন চাষির তালিকা মৎস্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।