বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
পৃথিবীর জন্মের রহস্য জানতে হয়ত আর বেশি দেরি নেই। ছায়াপথের গোপন কথা, নক্ষত্রমণ্ডলের জন্ম ইতিহাস সবই ধীরে ধীরে বায়োস্কোপের পর্দার মতো চোখের সামনে খুলে যাবে। মহাশূন্য ফুঁড়ে ব্রহ্মাণ্ড তৈরির রহস্য বের করে আনবে নাসার দূরবীন।
বড়দিনেই মহাকাশ গবেষণায় নতুন যুগের সূচনা করেছে নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। হাবল টেলিস্কোপের থেকেও এর দূরদৃষ্টি বেশি। হাবল যেখানে আলোক তরঙ্গ নিয়ে নাড়াচাড়া করে, জেমস ওয়েব সেখানে ‘বিগ ব্যাং’ বা মহাবিস্ফোরণের সূত্র খুঁজে আনবে। ২৫ ডিসেম্বর রকেটে চেপে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাইরে মহাকাশে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে জেমস ওয়েব দূরবীনকে। এখন মহাশূন্যে একে একে পাপড়ি মেলবে দূরবীন।
পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য বিশাল অ্যান্টেনা রয়েছে জেমস ওয়েবের। শক্তি জোগাবে পেল্লায় সোলার প্যানেল। মহাশূন্যে পৌঁছেই সেগুলি খুলতে থাকবে এক এক করে। হাবল টেলিস্কোপ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, জেমস ওয়েব একধাপ এগিয়ে সৌরমণ্ডলের কর্তা সূর্যকে প্রদক্ষিণ করবে। সূর্যের চোখা চোখা রশ্মির ফলা থেকে বাঁচতে এতে রয়েছে বিশাল সানশিল্ড। উৎক্ষেপণের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই টেলিস্কোপের সুবিশাল আয়না খুলে যাবে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে গ্রহ-নক্ষত্র, ছায়াপথকে খুঁটিয়ে দেখবে জেমস ওয়েব।
টাইম মেশিনে চেপে ফিরে যাবে ১৩০০ কোটি বছর আগে
১৩৮০ কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং-এর পর কীভাবে ব্রহ্মাণ্ড তৈরি হয়েছিল সে খবর খুঁজে আনার দায়িত্ব জেমস ওয়েবের। কীভাবে জন্ম-মৃত্যু হয় তারাদের, নক্ষত্রপুঞ্জের জন্ম ইতিহাস, গ্রহদের গোপন কথা, ছায়াপথের ফিসফিসানি সবই জেনে-বুঝে পৃথিবীতে খবর পাঠাবে নাসার দূরবীন। সেই জন্মের পর থেকে মহাকাশে য়ে ক্রমবর্ধমান বিবর্তন হয়ে চলেছে সেই ধারাকে পর পর সাজিয়ে বিশ্লেষণ করবে জেমস ওয়েব।
টাইম মেশিনে চেপেই ফিরে যাবে হাজার হাজার কোটি বছর আগে। সে সময় মহাশূন্যে কী কী ঘটনা ঘটেছিল তা জানার চেষ্টা করবে নাসার দূরবীন। সূর্যের চেয়েও ভারী ও রাক্ষুসে ব্ল্যাক হোলদের চিনবে। সে খবরও পাঠাবে পৃথিবীতে।
পৃথিবী থেকে ১০ লক্ষ মাইল দূরে রাখা হবে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপকে। এটিই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও জটিল প্রযুক্তির স্পেস সায়েন্স অবজারভেটরি। ৬ মাসের মধ্যে মহাশূন্যে গুছিয়ে বসবে দূরবীন। তারপরেই শুরু হবে কাজ। ইনফ্রারেড রশ্মির তরঙ্গদৈর্ঘ্য নিয়ে কাজ করবে। ইনফ্রারেড আলো মানে সামান্য তাপ। ওই সামান্য তাপ শনাক্ত করতে টেলিস্কোপকে রাখতে হবে মাইনাস ২২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. করণ জানি বলছেন, ৩০ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিকল্পনায় এই টেলিস্কোপ তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। নাসার সঙ্গে এই প্রজেক্টে হাত মিলিয়েছে ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি।
সূর্যের চারদিকে ঘুরবে এই দূরবীন। এর অবস্থান হবে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝে ২ নম্বর ল্যাগারাঞ্জ পয়েন্টে। আর্থ-সান সিস্টেমে পাঁচটি পজিশন আছে, তার মধ্যে ১ নম্বর ল্যাগারাঞ্জ পয়েন্টে আছে সোলার ও হেলিওস্পেরিক অবজারভেটরি। ২ নম্বর পয়েন্টে যাবে জেমস ওয়েব। এখান থেকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সহজ এবং একই সঙ্গে সৌরমণ্ডলকে খুঁটিয়ে দেখাও সম্ভব। এখ মাস সময় লাগবে এই পয়েন্টে পৌঁছতে।