বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি যুবক রায়হান কবিরের মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ে নামার কথা জানিয়েছেন সেখানকার দুই আইনজীবী।
রবিবার মালয় মেইল-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইনজীবী সুমিতা শান্তিন্নি কিশনা এবং সেলভরাজ চিনিয়াহ মামলার সঙ্গে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন।
দুটি ভিন্ন আইনজীবী প্রতিষ্ঠানের দুই আইনজীবী শনিবার রাতে জানান, তারা ইতিমধ্যে মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ এবং রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশকে তাদের নিয়োগের বিষয়ে অবগত করেছেন।
‘চিঠিতে আমরা আমাদের ক্লায়েন্টের সঙ্গে দেখা করার তারিখ চেয়েছি,’ সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে দুই আইনজীবী বলেন, ‘সোমবার দুপুর দুইটার দিকে আমরা বুকিত আমানে থাকবো।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার একটি প্রামাণ্যচিত্রে অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ান প্রশাসনের আচরণের বর্ণনা দিয়ে ফেঁসে যান নারায়ণগঞ্জের ছেলে রায়হান। ওই অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়ার পরপর তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়।
মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অভিবাসীদের প্রতি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক চলতি লকডাউনে বৈষম্যমূলক ও বর্ণবাদী আচরণ করা হয়েছে বলে ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়া’স লকডাউন’ শিরোনামে ২৫ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি কয়েক সপ্তাহ আগে আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রকাশিত হলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। সেখানে রায়হান সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। এতে বিপাকে পড়ে গেছেন তিনি। ১২ জুলাই তার ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করা হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অভিযোগ করা হয় । মামলা করা হয়েছে আল-জাজিরার বিরুদ্ধেও। ৭ জুলাই নোটিস জারি করে তার সন্ধান চাওয়া হয়। এরপর শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে।
রায়হান কবিরের বাড়ি নারায়নগঞ্জের বন্দর উপজেলা। তার বাবা শাহ আলম চাকরি করেন পোশাক শিল্পে। তোলারাম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন রায়হান। এরপর চলে যান মালয়েশিয়ায়।
অভিবাসীদের প্রতি মালয়েশিয়ান সরকারের ‘অবিচারের’ কথা তুলে ধরা বাংলাদেশের সেই রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করায় দেশটির প্রশাসনের সমালোচনা করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এই সংবাদমাধ্যমের একটি প্রামাণ্যচিত্রে নিজের মতামত তুলে ধরেই ফেঁসে যান রায়হান।
আল-জাজিরার পাশাপাশি বাংলাদেশের ২১টি সংগঠন দ্রুততম সময়ে রায়হানের মুক্তির দাবি করেছে। শনিবার যৌথভাবে বিবৃতি দেওয়া এই সংগঠনগুলো অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে থাকে।
আল-জাজিরা নিজেদের টুইটারে লিখেছে, ‘বাংলাদেশি অভিবাসী রায়হান কবিরের গ্রেপ্তারের ঘটনা গোলমেলে ব্যাপার।’
‘তিনি প্রামাণ্যচিত্রে কথা বলার জন্য অনলাইনে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাকে উদ্দেশ্য করে বিদ্বেষমূলক কথা ছড়ানো হয়েছে। কথা বলার দায়ে এভাবে অপরাধী বানানোকে কখনোই আমরা সমর্থন করি না। ’
মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম দ্য স্টার’র প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, টানা দুই সপ্তাহের গোয়েন্দা তৎপরতার পর শুক্রবার রায়হান কবিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার থেকে ১৪ দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন রায়হান।
রায়হান যাতে আর কখনো মালয়েশিয়ায় যেতে না পারেন, সেজন্য তাকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে বলেও শনিবার জানিয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক খায়রুল দায়াইমি দাউদ।