জানা যায় ভারতবর্ষের রাজা-সম্রাটদের অন্দরমহলেও ব্যাপকভাবে পান খাওয়ার প্রচলন ছিল। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়তমা নূরজাহানের পান খাওয়ার অভ্যাস ছিল এবং তিনি তা অন্দরমহলের অন্যান্যের কাছেও জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলাদেশে উৎপাদিত বাংলা, মিঠা, সাচি, কর্পূরি, গ্যাচ, নাতিয়াবাসুত, উজালী, মাঘি, মহানলী, চেরফুলী, ভাবনা, সন্তোষী, জাইলো, ভাওলা, ঝালি প্রভৃতি জাতের মধ্যে মহেশখালীর মিষ্টিপান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ মহেশখালী।
এখানকার অধিবাসীদের অন্যতম সুপ্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পেশাও পান চাষ। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এর জমি পানচাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। মহেশখালীর পানের অন্যতম বিশেষত্ব হলো এর মিষ্টি স্বাদ, যার কারণে এই পান সারা দেশে বিখ্যাত। মহেশখালীর এই বিখ্যাত মিষ্টিপান মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানিও করা হয়। এখানকার পানের সুনাম দেশের সীমানা পেরিয়ে এশিয়া মহাদেশ ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি আফ্রিকায়ও ছড়িয়ে রয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ মিষ্টিপান মহেশখালী দ্বীপে উৎপাদিত হয়ে থাকে। পান অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি ফসল।
সুতরাং পান চাষের জন্য বিশেষ দক্ষতা ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা জরুরি। পানক্ষেতকে বলা হয় পানের বরজ। মহেশখালীর পানের বরজ সাধারণত দুই ধরনের- পাহাড়ি বরজ এবং বিল বরজ। উপজেলার বড় মহেশখালী, হোয়ানক, কালারমারছড়া, ছোট মহেশখালী ও শাপলাপুর ইউনিয়নের পাহাড়ের ঢালু ও সমতল কৃষি জমিতে যুগ যুগ ধরে পান চাষ করে আসছে স্থানীয় পানচাষিরা। জমির শ্রেণি অনুসারে পাহাড়ি এলাকার ভূমিতে পান চাষ দুই থেকে তিন বছর স্থায়ী হলেও সমতল জমিতে পান চাষ হয় মাত্র ছয় মাস। সমতল জমিতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়ে মে-জুনে শেষ হয়। অপরদিকে পাহাড়ি ঢালু জমিতে পান চাষ হয় বছরের যেকোনো সময়। এক বিরা বড় মিষ্টিপান ৪৪০ থেকে ৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। মাঝারি পান এক বিরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট পান ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চার৪টি পানে হয় এক গণ্ডা, এভাবে ৪৫ গণ্ডা পানকে এক বিরা বলা হয়। সপ্তাহে অন্তত দুদিন মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় পানের হাট বসে।