Home উদ্যোক্তা যশোরে নারী উন্নয়নের দ্বার খুলেছে

যশোরে নারী উন্নয়নের দ্বার খুলেছে

ছবি-আরটিভি নিউজ

গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র নারীদেরকে কাজে লাগিয়ে যশোরে দ্রুতই আসছে সমন্বিত সমবায় বাজার।

হাতের কাজ হস্তশিল্প কুটির শিল্পের কাজগুলোকে মূল্য সংযোজন সামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য হিসেবে বাজারজাত করে একদিকে কর্মসংস্থান, অপরদিকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দ্বার খুলতে যাচ্ছে।

বৈধ ট্রেড লাইসেন্সধারী যশোরের ২০ নারী উদ্যোক্তা এই সমবায় বাজারটির নেতৃত্বে আসছেন।

সমবায় অধিদপ্তরের দিক নির্দেশনায় এগিয়ে চলছে এই বাজার কার্যক্রম। হাতের ছোঁয়ায় উৎপাদিত দ্রব্যাদি নায্যমূল্যে বাজারজাত করতে সুইজ কন্ট্রাক নামে এক প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে।

প্রয়োজনে তৃণমূল পর্যায়ের উপকার ভোগীদের প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদান করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া ও পরিবেশগত কারণে শহর ও গ্রামের অনেক মানুষ তাদের অনগ্রসরতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

যশোরের প্রেক্ষাপটে অনগ্রসর মানুষের মধ্যে রয়েছে অনেক গুণ। অনেক কাজে পারদর্শী, কিন্তু কাজের যথাযথ মূল্যায়ন ও শ্রমমূল্য তারা পান না। সময়োপযোগী শিক্ষা প্রশিক্ষণ না থাকায় তারা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। হস্তশিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্পে তারা বিচ্ছিন্নভাবে সময় দিলেও কার্যত দারিদ্র তাদের পিছু ছাড়েনি কখনও।

এই প্রেক্ষাপটে যশোরের আট উপজেলার গ্রামাঞ্চলের কর্মে উদ্দমী দরিদ্র নারীদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত সমবায় বাজার করার ব্যাপারে প্রস্তাবনা আসে সমবায় অধিদপ্তর যশোর সদর উপজেলা কার্যালয় থেকে।

নকসী কাঁথা, হাতের কাজের বালিশ বেড সিটের কভার, পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, বাঁশ বেত কাঠের শিল্পের কাজ, এমনকি হাতে ভাজা মুড়ি, ঢেঁকি ছাটা চাল, চিড়ে, নারকেল পাটালি এই সমবায় বাজারে স্থান পাবে। গ্রামভিত্তিক গ্রুপ করে হাতের কাজে পারদর্শীদের কাজে লাগিয়ে তাদের শ্রম মূল্য দেওয়া হবে। পুঁজি না থাকা নারীদের প্রয়োজনে ঋণ সুবিধা দেয়া, অথবা আগাম টাকা দিয়ে কাজের ওয়ার্ডার দেওয়া হবে। আর যশোর জেলা শহর এবং উপজেলা পর্যায়ে ভালো পজিশন দেখে ঘর নিয়ে পরিচালিত হবে এই সমবায় বাজার। যশোর সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিত দাশের আহ্বানে ইতোমধ্যে যশোরের প্রভাবশালী ২০ নারী উদ্যোক্তা সাড়া দিয়েছে। নারী উদ্যোক্তা ও সমবায় কর্মকর্তারা যৌথভাবে যশোর পৌরসভার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। যাতে সুবিধাজনক জায়গায় সমবায় বাজারটি করা যায়।

এছাড়া দেশের নাম করা প্রতিষ্ঠান সুইজ কন্ট্রাকের সঙ্গে সংলাপ চলছে উদ্যোক্তাদের। তারা মার্কেটিংয়ে সহায়তা করে এই সমবায় বাজারকে গতিশীল করবে।

যশোরের গ্লামার বুটিক হাউজ ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড মিনি গার্মেন্টস, আয়োজন, রুপকথা, সেঁতুলি, কারুকাজের মতো আরও অনেক প্রতিষ্ঠান সমবায় বাজার নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে ২০ উদ্যোক্তাকে নিয়ে একটি কমিটির রুপরেখা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সমবায় বাজার পরিচালনা করতে দ্রুতই ওই কমিটি আত্মপ্রকাশ করবে। সমবায় বাজারের কয়েকটি শো’ রুম থাকবে।

এ ব্যাপারে সমবায় বাজারের অন্যতম উদ্যোক্তা গ্লামার বুটিক হাউজের সত্ত্বাধিকারী পারভীন আক্তার জানিয়েছেন, বিশেষ করে দরিদ্রদের নিয়ে গ্রামাঞ্চলে কাজ করা হবে। যশোর ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে স্থানীয় নারীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা হবে। রাজধানীর কয়েক ব্যবসায়ীর সঙ্গেও কথা হচ্ছে। অল্প পুঁজিতে পিছিয়ে পড়া নারীরা যাতে ঘরে বসেই উপার্জন করতে পারবে এনিয়ে কথা হচ্ছে। এই কাজে শহর ও গ্রাম সব জায়গা থেকে সাড়া মিলছে।

উদ্যোক্তা অনুপমা মিত্র জানিয়েছেন, একটি ভালো ও সময় উপযোগী উদ্যোগ এই সমবায় বাজার। আমরাই উৎপাদন করব আমরাই বিক্রি করব। আমাদের পিছিয়ে পড়া নারীদের উৎপাদিত গুণগত মানসম্মতভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এই সমন্বিত সমবায় বাজার হলে হাতের কাজের মূল্যায়ন বাড়বে। এ ব্যাপারে সরকারি সহায়তা কমনা করেন।

এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রনজিত কুমার দাশ জানিয়েছেন, যশোরে সমন্বিত সমবায় বাজারের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার সুবিধা তৃণমূল থেকে শুরু করে সবাই পাবেন। নির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা এবং বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে এগুবে এই বাজার। জেলা শহরে ভালো অবস্থানে হবে বৃহৎ এই বাজারটি। সেখানে নারীদের উৎপাদিত পণ্য থাকবে। অনেক ভালো পণ্য বাড়ি বসে বানান নারী। কিন্তু যথাযথ মূল্য পান না। অনেকের অনেক গুণ আছে, শ্রম দেওয়ার আগ্রহ আছে, সামর্থ্যও আছে। কিন্তু শ্রমমূল্য কম। এই সমবায় বাজার ক্রেতাদের সঙ্গে উৎপাদনকারীর মেলবন্ধন তৈরি করবে।
-আরটিভি