বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
যশোর: পদ্মা সেতু চালু হলে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালীর ফুল দ্রুতই পৌঁছে যাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরে। ফেরিঘাটের জটে পড়ে নষ্ট হবে না কোনও ফুল। দামও বেশ ভালো পাওয়া যাবে। এতে চাষিরা উপকৃত হবে। তাই অপেক্ষায় আছি সেতু উদ্বোধনের। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু ঘিরে এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন গদখালীর স্থানীয় ফুলচাষি মিজু মিয়া।
তিন বলেন, দেশের চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ফুল যশোর থেকে সরবরাহ হয়। এই অঞ্চলের প্রায় ১৫শ’ হেক্টর জমিতে ছয় হাজারের মতো চাষি ফুল চাষ করেন। প্রায় সারাবছরই এখান থেকে কমবেশি ফুল পাঠানো হয়। বিশেষ দিন ও উৎসবকে ঘিরে ফুল বেচাকেনার রেকর্ডও হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ফুল পৌঁছে যাবে ঢাকায়। এতে ফেরিঘাটে আটকে থেকে ফুল নষ্ট হওয়ার আর কোনও ভয় থাকবে না। আবার ফেরিঘাটের অজুহাতে পাইকারদের কম দাম দেওয়ারও দিন ফুরাবে।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, সেতু চালু হলে ঘাটের বিড়ম্বনা আর থাকবে না। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ফুল পাঠাতে পারবো। সাধারণত আমরা এখন সবজির ট্রাকে ও যাত্রীবাহী বাসে বান্ডিল করে ফুল পাঠাই। সেক্ষেত্রে বান্ডিল প্রতি এখন খরচ তিনশ’ টাকা। সেতু চালু হলে খরচ হয়তো কিছুটা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ফুলের দাম ‘কস্ট অ্যনালাইসিসের’ মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত চাষিরা লাভবান হবে বলে মনে করেন তিনি।
পদ্মা সেতু চালু হলে যশোর থেকে উৎপাদিত শাক-সবজিও দ্রুততম সময়ে রাজধানীতে চলে আসবে। ঘাটে আটকে থেকে আর নষ্ট হওয়ার ভয় থাকবে না। এতে চাষিরাও ভালো দাম পাবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোরের ঐতিহ্যবাহী সবজি হাট বার বাজারের পাইকার মনির হোসেন ভুট্টো বলেন, চার ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঢাকার যাত্রাবাড়িতে সবজি পৌঁছে দিতে পারবো। এরফলে আমাদের যেমন সময় বাঁচবে, তেমনি সবজি বিনষ্ট হওয়ার শঙ্কা থেকে মুক্ত হবো। তবে কমদামে রাজধানীবাসীদের সবজি খাওয়াতে সেতুর টোলের রেট কমানোর পক্ষে মতামত দেন তিনি। তার মতে, সেতুর টোল রেট কমলে পরিবহন খরচ কমে আসবে। এতে সহজে ও স্বল্পমূল্যে সবজি পৌঁছানো যাবে ঢাকায়। ক্রেতারাও কমদামে সবজি কিনতে পারবেন।
স্থানীয় চাষিরা জানান, যশোরে রবি, খরিপ-১ ও খরিপ-২ এই তিন মৌসুমে যথাক্রমে ১৬ হাজার, ১৪ থেকে ১৫ হাজার এবং ৬ থেকে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এ ধারাবাহিকতায় প্রায় সাড়ে ৮ লাখ মেট্রিকটন সবজি উৎপাদন হয়। যশোরের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিকটন। উদ্বৃত্ত অংশ ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এদিকে সেতু চালু হলে ঢাকায় গিয়ে দিনের কাজ দিনে শেষ করে বাড়ি ফেরা যাবে বলে মনে করেন যশোরের অভয়নগর উপজেলার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে ভোরে রওনা হয়ে সকালেই ঢাকা পৌঁছুতে পারবো। দিনের কাজ শেষে আবার ফিরে আসাও সম্ভব হবে। এই সেতুর ফলে আমাদের ঢাকার দূরত্ব বেশ কমবে। ঘাটের কোনও ঝামেলা পোহাতে হবে না।
কেবল নজরুলই নন, যশোরের অধিকাংশ মানুষেরই এমন ভাবনা। দীর্ঘসময় ধরে ফেরির জন্যে অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে তাদের ২৫ জুন।