Home দিল্লি রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ

রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ

 

দিল্লি:আশঙ্কা গাঢ় হচ্ছিল। শেষমেশ সেটাই সত্যি হল। সুরাতের আদালতের রায়ের পর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গেল।

লোকসভার সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে শুক্রবার জানিয়ে দেওয়া হল, সংশোধিত জনপ্রতিনিধি আইন মেনে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হল। আইনজ্ঞদের অনেকে বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, যেহেতু সুরাতের আদালত রাহুলকে জামিন দিয়েছে এবং কারাদণ্ডের সাজায় ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছে সেহেতু সাংসদ পদ যাবে না। কিন্তু তারপর যত বেলা গড়িয়েছে তত আরও বেশি আইনি ব্যাখ্যা আসতে শুরু করে। কপিল সিব্বল থেকে মহেশ জেঠমালানিরা বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, কোনওভাবেই রাহুলের সাংসদ পদ থাকতে পারে না। হলও তাই।

Image - রক্ষা পেলেন না রাহুল গান্ধী, খারিজ হয়ে গেল সাংসদ পদ

২০১৯ সালে কর্নাটকের ভোটের প্রচারে গিয়ে রাহুল গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যাঁরাই দুর্নীতি করছেন তাঁদেরই পদবি মোদী। আইপিএলে লুঠ করেছিলেন ললিত মোদী। নীরব মোদী টাকা লুঠ করে পালিয়ে গিয়েছেন। আর যিনি তাঁকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন তিনিও একজন মোদী। দু’জনেই একই রাজ্যের।’

এরপরেই গুজরাতের বিজেপির এক প্রাক্তন বিধায়ক, বর্তমান সাংসদ সুরাতের আদালতে মামলা করেন। তাঁরও পদবি মোদী। তিনি আদালতে বলেন, মোদী পদবিকে রাহুল গান্ধী অপমান করেছেন।

সেই মামলারই চূড়ান্ত রায় দান করে সুরাতের আদালত। বৃহস্পতিবার সশরীরে সুরাতের আদালতে হাজির ছিলেন রাহুল। দোষী সাব্যস্ত করার পর, সাজা ঘোষণার আগে রাহুলকে বিচারক জিজ্ঞেস করেন, আপনার কিছু বলার আছে? আপনি কি অনুতপ্ত? জবাবে রাহুল বলেন, ‘রাজনীতির মঞ্চ থেকে রাজনীতির কথা বলেছি। এখানে অনুতাপের কোনও বিষয় নেই।’ মামলাকারীর আইনজীবীরা তখন আর্জি জানান, রাহুল গান্ধী একরোখা মনোভাব দেখাচ্ছেন। ওঁকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হোক।

তারপর বিচারক রাহুলকে দু’বছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনান। পাল্টা রাহুল বলেন, তিনি এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চতর আদালতে যাবেন। যেহেতু তিন বছরের কম কারাদণ্ডের সাজা তাই সুরাতের ওই আদালতই রাহুলের জামিন মঞ্জুর করে। তাঁকে নির্দেশ দেয়, জেলযাত্রার এই সাজা আপাতত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত করা হল। এই সময়ের মধ্যে রাহুলকে উচ্চতর আদালতে পিটিশন দাখিল করতে হবে। তারপরেই আদালত থেকে বেরিয়ে যান রাহুল।

১৯৫২ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারায় বলা ছিল, নিম্ন আদালতে কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে যদি দু’বছরের বা তার বেশি জেলের সাজা দেওয়া হয় তাহলে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ সঙ্গে সঙ্গে খারিজ হবে না। তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন।

৬০ বছর এভাবেই চলছিল। কিন্তু ৬১ বছরের মাথায় ২০১৩ সালের অক্টোবরে যুগান্তকারী রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি একে পট্টনায়েক ও বিচারপতি এসজে মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চ বলে, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে ৮ (৪) ধারা অসাংবিধানিক। যে আদালতই কোনও সাংসদ বা বিধায়কের বিরুদ্ধে দু’বছর বা তার বেশি জেলের সাজা দিক সঙ্গে সঙ্গে তাঁর সাংসদ বা বিধায়ক পদ খারিজ হয়ে যাবে।

এমন উদাহরণ সম্প্রতিই ঘটেছে। ২০১৯-এর একটি ঘৃণাভাষণের মামলায় উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পার্টির বিধায়ক আজম খানকে তিন বছরের জেলের সাজা দিয়েছে এলাহাবাদ কোর্ট। ২০১৩-র সংশোধিত আইন অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে আজম খানের বিধায়ক পদও খারিজ হয়ে গিয়েছে। লালু প্রসাদ যাদবকে জেল খাটতে হয়েছে চারবার। শুধু জেলে যাওয়াই নয়, সাজা খাটার পর আরও ছয় বছর ভোটে প্রার্থী হতে পারেন না অভিযুক্ত। যেমনটা হয়েছে লালু ও আজম খানের ক্ষেত্রে।