বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ৭ দিনের ‘কঠোর লকডাউনের’ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।।
সোমবার ( ১২ এপ্রিল) সরকারি-বেসরকারি অফিস এবং গণপরিবহন বন্ধ রাখাসহ ১৩ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে শিল্প কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে।
১৩ দফা বিধি-নিষেধ হলো-
১. সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। তবে বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থলবন্দর এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
২. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৩. সব প্রকার পরিবহন (সড়ক, নৌ, রেল, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট) বন্ধ থাকবে। তবে পণ্য পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জরুরি সেবার ক্ষেত্রে এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।
৪. শিল্প-কারখানাগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
৫. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরি সেবা, যেমন: কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, বন্দরগুলোর (স্থলবন্দর, নদীবন্দর ও সমুদ্রবন্দর) কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে।
৬. অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মরদেহ দাফন বা সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। তবে টিকা কার্ড দেখানো সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
৭. খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা এবং রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত কেবল খাদ্য বিক্রয় বা সরবরাহ করা যাবে। শপিং মলসহ অন্যান্য দোকানগুলো বন্ধ থাকবে।
৮. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। বাজার কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৯. বোরো ধান কাটার জরুরি প্রয়োজনে কৃষি শ্রমিক পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন সমন্বয় করবে
১০. সারা দেশে জেলা ও মাঠ প্রশাসন উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল জোরদার করবে।
১১. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবেন।
১২. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুমা ও তারাবিহ নামাজের জমায়েত বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা জারি করবে।
১৩. এই নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজনে সম্পূরক নির্দেশনা জারি করতে পারবে।
এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য গণপরিবহন চলাচলসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছিল সরকার। রবিবার এই বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার দিন তা আরও দুই দিন বাড়ানো হয়।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। করোনায় প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। এরপর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল। প্রথমে ১০ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হলেও পরে কয়েক দফায় বাড়িয়ে টানা ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি ছিল। প্রথমে জরুরি সেবা ছাড়া প্রায় সবকিছু বন্ধ থাকলেও একপর্যায়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাসহ কিছু কার্যক্রম চালু করা হয়েছিল।
চলতি বছরও ‘লকডাউনে’ পোশাক ও বস্ত্র কারখানা খোলা রাখার দাবি জানায় বিজিএমইএসহ পোশাক খাতের চারটি সংগঠন। রবিবার তারা সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায়। পরে লকডাউন বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল সভায় তাদের দাবির বিষয়টি উঠে আসে। সভায় লকডাউনের সময় শিল্পকারখানা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক জানান, ১৪ এপ্রিল থেকে সরকার যে নির্দেশনা দেবে, সেভাবেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জানান, ১৪ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পণ্যবাহী উড়োজাহাজ (কার্গো) ও বিশেষ ফ্লাইট চলাচল করবে।