জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ লাখ ৫৬ হাজার টন। অপরিশোধিত লবণের চাহিদা রয়েছে ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টন। অর্থাৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে এবং অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি প্রতিহত করে সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে লবণের কোনো ঘাটতি সৃষ্টি হবে না।
বর্তমানে দেশের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ভোজ্য লবণ বিক্রি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৬ টাকা। চলতি অর্থবছরে ভোজ্য লবণের চাহিদা রয়েছে ৮ লাখ ৭৬ হাজার টনের। শিল্প লবণের চাহিদা রয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার টনের। মৎস্য খাতে লবণের চাহিদা রয়েছে ৩৪ হাজার টন ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে মোট ২৩ লাখ ৩৫ হাজার অপরিশোধিত লবণ উৎপাদন হবে। তবে লবণের মোট চাহিদা রয়েছে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার টন।
বিভিন্ন বেসরকারি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শিল্প লবণ হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪ লাখ ৮৯ হাজার টন লবণ আমদানি করেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি করেছে ১১ লাখ ২১ টন লবণ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি করেছিল ৭ লাখ ৫৮ হাজার টন লবণ।
সরকারের ওই সংস্থাটি মনে করে, এসব লবণ শিল্প লবণ (সোডিয়াম সালফেট) ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা হলেও আমদানি মূল্য কম থাকায় পরবর্তী সময়ে পরিশোধন ও আয়োডিন যুক্ত করা ছাড়াই কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভোজ্য লবণ হিসেবে প্যাকেটজাত করে বাজারে বিক্রি করে। এতে দেশের লবণ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের শিল্পকারখানায় লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার শিল্প লবণ আমদানির অনুমতি দেয়। লবণ আমদানি ব্যয় দেশে উৎপাদিত লবণের তুলনামূলক কম হওয়ায় এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী লবণ সরবরাহে ঘাটতির গুজব সৃষ্টি করে লবণ উৎপাদন মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই লবণ আমদানির তৎপরতা চালায়। আবার আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা প্রতিবেশী দেশ থেকে শিল্প লবণ হিসেবে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে তা প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারজাত করে। সেক্ষেত্রে আমদানি লবণের দাম কম হওয়ায় দেশি লবণের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দেশের ৮টি জোনের ২৭০টি লবণ কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৯৯ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে বাজারে দেশে উৎপাদিত লবণের সরবরাহ কমিয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে এবং আমদানিকৃত শিল্প লবণ ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি করে। ঈদুল আজহায় পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে কিছু আমদানিকারক শিল্প লবণ আমদানি করে ভোজ্য লবণ হিসেবে বাজারে বিক্রি করে। এতে একদিকে লবণ চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে ভোক্তা সাধারণ মানহীন ও আয়োডিনবিহীন লবণ ক্রয় করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন।