বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
যোশুয়া হুতাগুলাং থাকেন ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায়। তাঁর বয়স ৩৩। পেশা, কফিন বানানো। গত অগাস্টে এক সন্ধ্যায় তিনি যখন বাড়ির বাইরে কাজ করছিলেন, তখন প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে তাঁর বাড়ি। দৌড়ে গিয়ে তিনি দেখেন, বাড়ির টিনের চাল ভেঙে নীচে পড়েছে এক পাথর। হাত দিয়ে তুলে দেখেন, পাথরটা বেশ গরম।
পরে যোশুয়া জানতে পারেন, তাঁর বাড়িতে যে পাথরটি পড়েছে, তা একটি উল্কাখণ্ড। তার ওজন ২.১ কিলোগ্রাম। তাঁর কথায়, “সেদিন সন্ধ্যায় এত জোরে শব্দ হয়েছিল যে, পুরো বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। আমি দৌড়ে গিয়ে দেখি একটা পাথর টিনের চাল ভেদ করে নীচের রকে পড়েছে।” ‘কোম্পাস’ নামে এক সংবাদ সংস্থাকে তিনি জানান, আমি যখন পাথরটা হাতে তুললাম, তখনও সেটা গরম ছিল।
যোশুয়া ফেসবুকে উল্কাখণ্ডের ছবি শেয়ার করেন। নেট দুনিয়ায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে সেই ছবি। পরে উল্কাখণ্ড বিক্রি করে তিনি পান ১০ লক্ষ পাউন্ড। অর্থাৎ প্রায় ৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। ‘ইনডিপেনডেন্ট’ পত্রিকার মতে, ওই উল্কাখণ্ডের বয়স ৪৫০০ কোটি বছর। ওই ধরনের পাথর অতি বিরল। তার প্রতি গ্রামের দাম ৬৪৫ পাউন্ড বা ৬৩ হাজার টাকা।
যোশুয়া যাঁকে উল্কাখণ্ডটি বিক্রি করেছেন, তাঁর নাম জারেদ কলিনস। তিনি আমেরিকার নাগরিক। পরে কলিনস সেটি জে পিয়াটেক নামে এক সংগ্রাহককে বিক্রি করেছেন। উল্কাখণ্ডটি এখন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর মেটিওরাইটস স্টাডিজের সংগ্রহশালায় রাখা আছে। তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে উল্কাখণ্ডটি সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
যোশুয়া জানিয়েছেন, তিনি উল্কাখণ্ড বিক্রি করে যে টাকা পেয়েছেন, তা তাঁর ৩০ বছরের বেতনের সমান। বিপুল অর্থ পেয়ে তিনি ভাবছেন, আর কাজ করবেন না। গ্রামে একটি নতুন গির্জা নির্মাণ করবেন।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রতিদিন মহাকাশ থেকে লক্ষ লক্ষ উল্কা পৃথিবীর আবহমণ্ডলে প্রবেশ করে। তাদের বেশির ভাগের আকৃতি বালির দানার মতো। উল্কা যখন মাটির ৭৫ থেকে ১২০ কিলোমিটার ওপরে আসে, তখন তাকে দেখা যায়। উল্কা নিয়ে পাশ্চাত্যে গবেষণা শুরু হয় ঊনবিংশ শতকের শুরুতে। ১৮০৭ সালে আমেরিকার কানেকটিকাট প্রদেশের ওয়েস্টনে পড়া একটি উল্কা নিয়ে গবেষণা করেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক বেঞ্জামিন সিলিম্যান। তাঁর মনে হয়, উল্কাটি এসেছে মহাকাশ থেকে। কিন্তু তখনও বিজ্ঞানী মহলে উল্কা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়নি।