Home Third Lead চীনে এবার নতুন আতঙ্ক ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস

চীনে এবার নতুন আতঙ্ক ল্যাঙ্গিয়া ভাইরাস

ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাস

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

বিশ্বজুড়ে এখনও কমেনি করোনা ভাইরাসের দাপট। তার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ। এবার দোসর হিসেবে মাথাচাড়া দিল আরও এক নতুন ভাইরাস। যা সর্বপ্রথম থাবা বসিয়েছে চীনে। এই ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাসে দেশটিতে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। করোনা ভাইরাসও চীন থেকেই ছড়িয়েছিল।
জানা গিয়েছে, চীনের হেনান এবং শানডং প্রদেশের বাসিন্দাদের শরীরে থাবা বসিয়েছে এই ভাইরাস। পশুর দেহ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয় ভাইরাসটি। তাইওয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল জানিয়েছে, চীনের দুই প্রদেশে মোট ৩৫ জন ল্যাঙ্গিয়া হেনিপাভাইরাসে আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। যাদের মধ্যে ২৬ জনই শুধুমাত্র ল্যাঙ্গিয়ায় সংক্রমিত।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, নিপা ভাইরাসের মতোই এই হেনিপাভাইরাস বাদুরের থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায় এর প্রভাব বেশি পড়তে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, খাবার, পানীয় জল কিংবা পরিবেশের মাধ্যমে অন্য প্রাণীর থেকে মানুষের দেহে ছড়াতে পারে এই হেনিপাভাইরাস।
এর উপসর্গ কী? গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই সংক্রমণের ক্ষেত্রে রোগীর শরীরে জ্বর, ক্লান্তি, সর্দি-কাশি, ক্ষুধা না পাওয়া, পেশীতে ব্যথা এবং বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। আরও চিন্তার বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি। এই রোগের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। শারীরিক সমস্যা দূর করতে স্বাভাবিক যে চিকিৎসা করা হয়, সেভাবেই আপাতত রোগীদের শুশ্রুষা করা হচ্ছে।
তবে এখনই আতঙ্কিত না হওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কার্যত নেই বললেই চলে।
গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে তিন-চতুর্থাংশ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে এই ভাইরাসটি। তবে এখনও পর্যন্ত নতুন কোনও ক্ষেত্রেই ল্যাংয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঘটেনি কারও। বেশিরভাগ রোগীরই উপসর্গ মৃদু। রোগীদের মধ্যে ফ্লু-এর মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
বেজিং ইনস্টিটিউট অফ মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড এপিডেমিওলজির গবেষকরা বলছেন, এই ভাইরাসের ক্ষেত্রে মূল উপসর্গ জ্বর। তাছাড়া কাশি, ক্লান্তি, পেশীতে ব্যথা, বমির মতো উপসর্গও লক্ষ্য করা গিয়েছে আক্রান্তদের মধ্যে।
করোনা যেতে না যেতেই চীনে শনাক্ত হয়েছে ল্যাংয়া ভাইরাস। ছড়াচ্ছে প্রাণী থেকে মানুষে। তবে করোনার মতো মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে কিনা তা জানা যায়নি।
সোমবার তাইওয়ানের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ বিভাগ টিসিডিসি জানায়, চীনের মূলভূখ- শানডং ও হেনান প্রদেশে ৩৫ জনের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
উৎস ও বিস্তার অনুসন্ধানে নিউক্লিক এসিড পরীক্ষা শুরু করেছে টিসিডিসি। এনিয়ে সতর্কতা জারি করেছে সংস্থাটি। পরামর্শ দিয়েছে ভাইরাসের তথ্য গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের।
বলা হয়, সেরোলজিক্যাল জরিপে দুই শতাংশ ছাগল, পাঁচ শতাংশ কুকুর ও অন্যান্য গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
নতুন এই ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স ও পর্যবেক্ষণ বাড়াতে গবেষণাগার আরো উন্নত করার কথা জানিয়েছে টিসিডিসি।
জ্বর, ক্লান্তি, কাশি, ক্ষুধা কমে যাওয়া, পেশিতে অস্বস্তি, বমি ভাব, মাথা ব্যথায় ভুগছে আক্রান্তরা। কমে গেছে রক্তে শ্বেতকণিকা ও প্লেটলেটের পরিমাণ।
আট শতাংশের কিডনি ও যকৃতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ভাইরাসে এখনো পর্যন্ত কারো মৃত্যু হয়নি। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ভয়াবহ হতে পারে ল্যাংয়া হেনিপাভাইরাস।
ল্যাংয়া ভাইরাসটি সম্প্রতি শনাক্ত করা হয়েছে। তাইপে সিডিসি জানিয়েছে, নিউক্লিক এডিস পরীক্ষার মাধ্যমে মানুষে বিস্তার সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যাবে।
এদিকে, সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আক্রান্ত অঞ্চলের চারপাশে কয়েক হাজার মাইল পর্যন্ত বেড়া তৈরি করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ।
মারাত্মক নিপাহ ভাইরাসের পরিবারেরই সদস্য এই ল্যাংয়া ভাইরাস। নিপাহ ভাইরাস করোনার থেকে বেশি মারাত্মক। কারণ আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশ প্রাণ হারান। বিশ্বের পরবর্তি অতিমারির কারণ হতে পারে এই নিপাহ ভাইরাস।