শামসুল ইসলাম
চট্টগ্রাম: সিঙ্গাপুর, কলম্বোসহ বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে জট ও বড় জাহাজের সংকটে ঈদের আগে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তৈরি পোশাকসহ অন্য রপ্তানি পণ্যের চালান জাহাজীকরণ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কন্টেইনারে পূর্ণ হয়ে উঠছে বেসরকারি ডিপোগুলোও। সংকট উত্তরণে বন্দর ও স্টেক হোল্ডারদের জরুরি বৈঠকে নেওয়া হয়েছে ৭ সিদ্ধান্ত। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সংকট নিরসন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জট না থাকলেও সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংসহ চীনের বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে কিছুদিন ধরে জট সৃষ্টি হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে বার্থিংয়ে বিলম্বের কারণে চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া রপ্তানি কনটেইনার মাদার ভেসেলের কানেকশন পেতে ১০-১২ দিন দেরি হচ্ছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার জাহাজীকরণ নিয়ে বড় সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঈদুল আজহার আগে বিভিন্ন পোশাক প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ রপ্তানি চালান জাহাজীকরণের শিডিউল রয়েছে। বেসরকারি ডিপোগুলোতে জটের কারণে রপ্তানি পণ্যবাহী বিপুলসংখ্যক ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান পণ্যের চালান আন স্টাফিং করার জন্য ৮-১০ দিন বিভিন্ন আইসিডির বাইরে অপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, রপ্তানি পণ্য বোঝাই কন্টেইনার শিপমেন্ট দ্রুত ও সহজীকরণ বিষয়ে গত সোমবার স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। বৈঠকে বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিজিএমইএ, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডাস অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বেসরকারি আইসিডির সংগঠন বিকডাসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিজিএমইএ নেতারা রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণে বিদ্যমান সমস্যা তুলে ধরে ঈদুল আজহার আগে তৈরি পোশাক শিল্পের রপ্তানি চালান জাহাজীকরণে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে বন্দর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বিকডার প্রতিনিধিসহ অন্যরাও নিজস্ব মতামত তুলে ধরেন।
বৈঠকে সংকট উত্তরণে সর্বসম্মতিক্রমে সাতটি সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে বন্দর জেটিতে থাকা ২০ ফুটের খালি কন্টেইনার ফোর্স শিপমেন্ট ও বেসরকারি ডিপোর জায়গা ফাঁকা করতে সেখান থেকে খালি কন্টেইনার বন্দর জেটিতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। বেসরকারি ডিপোতে রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ কন্টেইনারগুলো দ্রুত জাহাজীকরণে চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে ফিডার ভেসেল বৃদ্ধি এবং অন্যান্য শিপিং লাইনের ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে রপ্তানি কন্টেইনার পরিবহনে মার্কস লাইনকে নির্দেশনা প্রদান, চট্টগ্রাম-কলম্বো রুটে বিভিন্ন শিপিং কোম্পানি কর্তৃক নতুন ফিডার ভেসেল পরিচালনার ক্ষেত্রে বন্দরের দ্রুত অনুমতি এবং রপ্তানি পণ্য পরিবহনের জন্য অগ্রাধিকার ভত্তিতে বার্থিংয়ের সুবিধা প্রদান, চট্টগ্রাম বন্দরে আগত কন্টেইনার জাহাজসমূহকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বার্থিং ও জেটির সংখ্যা বৃদ্ধি করা, মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) ও ফিডার ক্যারিয়ারদের মধ্যে কমন ক্যারিয়ার এগ্রিমেন্ট দ্রুত বাস্তবায়ন করা, রপ্তানি পণ্য চালান হ্যান্ডলিংয়ের জন্য কয়েকটি বেসরকারি আইসিডির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য আইসিডিতেও কার্যক্রম সম্পাদনে শিপিং লাইনকে নির্দেশনা প্রদানের জন্য বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি বায়ার্স ফোরামের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা এবং চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জট না থাকা সত্ত্বেও ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে সৃষ্ট জটের প্রভাব এবং বাংলাদেশে বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য পরিবহনে শিপিং কোম্পানি মার্কস লাইনের ওপর অতিরিক্ত বুকিংয়ের কারণে সৃষ্ট জটিলতার বিষয়টি বিজিএমইএ কর্তৃক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে উপস্থাপন করা।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক এসব সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জরুরি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর আলোকে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই এসব সিদ্ধান্তের সুফল আসবে।
-দেশ রূপান্তর