বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: ঈদের পর শেয়ারবাজারে হাজার কোটি টাকার লেনদেনে বাজার ঘুরে যাওয়ার যে আশা বিনিয়োগকারীরা করেছিলেন, তা ফিকে হতে শুরু করেছে। ঈদের পর চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিন বেশিরভাগ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স বেড়েছিল প্রায় ৫৫ পয়েন্ট। আর মঙ্গল ও বুধবার এই দুই দিনে এ সূচকই ১০৬ পয়েন্ট হারিয়েছে। অর্থাৎ আগের দুই দিনের বৃদ্ধির প্রায় দ্বিগুণ। এর মধ্যে বুধবার সূচকটি ৭৩ দশমিক ৬ পয়েন্ট হারিয়ে ৬৫৯২ পয়েন্টের নিচে নেমেছে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (এসইসি) সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বিও হিসাব ব্যবহার করে বিদেশিদের বড় অঙ্কের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে বাজারে পতন ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকালের দরপতনে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি থেকেও বড় বিক্রিচাপ এসেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে গেছে এমন বিও হিসাব ব্যবহার করে বিদেশিদের ১২ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করা হয়েছে। গতকালের দরপতনের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে এসইসির কর্মকর্তারা। পুরনো বন্ধ হিসাব ব্যবহার করে বিদেশিদের শেয়ার বিক্রি করার দায়ে গতকাল লেনদেন শেষে ডিএসইর সদস্য প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ ও কাস্টোডিয়ান এইচএসবিসি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এসইসি। পাশাপাশি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও সিডিবিএলের কাছে মতামতও জানতে চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এছাড়া বাজারে সহায়ক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখতে না পারার ব্যাখ্যা চেয়ে আইসিবিকেও চিঠি দিয়েছে কমিশন।
তবে বন্ধ হিসাব ব্যবহার করে শেয়ার বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের কর্মকর্তারা। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসানুর রহমান বলেন, বন্ধ হিসাবের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন হলে তা নিষ্পত্তি হবে না। এক্ষেত্রে বন্ধ নয় বরং সচল বিও হিসাব ব্যবহার করেই বিদেশিদের শেয়ার লেনদেন করা হয়েছে।
গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৭৯টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের মধ্যে ৩২৩টির দরপতন হয়েছে। বিপরীতে ৩৫টির দর বেড়েছে ও ২১টির দর অপরিবর্তিত ছিল।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল লেনদেন শুরুর প্রথম সোয়া এক ঘণ্টায় বেশিরভাগ শেয়ারের দরবৃদ্ধিতে ডিএসইর প্রধান সূচকটি আগের দিনের চেয়ে ১০ পয়েন্ট বাড়তে দেখা যায়। এরপর বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ শুরু হলে সূচক পয়েন্ট হারাতে থাকে। দুপুর ১টার পর বিক্রিচাপ বেড়ে গেলে সূচক বড় পতনে এগিয়ে যায়। এ সময় এসইসি থেকে বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজে শেয়ার ক্রয়ের অনুরোধ জানানো হলেও তাতে খুব একটা সাড়া মেলেনি। ফলে দিনশেষে ৭৩ পয়েন্টের বেশি পতন দিয়ে লেনদেন শেষ হয়।
দরপতন সত্ত্বেও গতকাল ডিএসইর লেনদেন ছিল হাজার কোটি টাকার ওপরে। যদিও তা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ১৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার। অবশ্য এর মধ্যে সাড়ে ৯৮ কোটি টাকার লেনদেনই হয়েছে ব্লক মার্কেটে।