বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আশা করেছেন যে দরপতন বন্ধ হয়ে শিগগিরই স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে পুঁজিবাজার।
তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক কারণে দেশের অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হয়েছে, তার প্রভাব পুঁজিবাজারে পড়ছে। এখানে আমরা অনেকটা অসহায়। তবে এ পরিস্থিতি নিশ্চয়ই দীর্ঘায়িত হবে না। এখন প্রথম করণীয় হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হওয়া, আমরা সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি, যাতে লোকসানে কম দামে শেয়ার না বিক্রি করেন। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এখন বাজারে এসব বিনিয়োগকারীই শেয়ার কিনছে।’
তিনি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, ‘ব্রোকার ডিলারদের বিনিয়োগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বাজার থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে নিয়েছে কি না, সেসব অনুসন্ধান চলছে। পাশাপাশি অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, বিএপিএলসির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, শিগগিরই বাজার আবার স্বাভাবিক ধারায় ফিরবে।’
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ পুঁজিবাজারে দরপতন প্রসঙ্গে বলেছেন যে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা হতাশ। তারা মনে করছেন, আগামীতে সংকট আরও বাড়বে। তাই লোকসান কমাতে শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা। ডলার সংকটের কারণে বিদেশিরাও শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও নিষ্ক্রিয়। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে কারখানায় উৎপাদন কমে যাবে বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা, যা বিক্রি চাপ বাড়াতে সহায়তা করছে। বৈশ্বিক কারণে শুধু স্থানীয় কোম্পানি নয়, বহুজাতিক কোম্পনিগুলোর আয় কমেছে। ফলে সব মিলিয়ে এখন আস্থা রাখার মতো পরিবেশ নেই পুঁজিবাজারে।’
আমদানি ব্যয়ের চাপ, ডলারের বিপরীতে টাকার অব্যাহত অবমূল্যায়ন, রিজার্ভ ধরে রাখতে সরকারের ব্যয়সংকোচন নীতিমালাসহ বিভিন্ন কারণে অর্থনীতিতে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারেও। কোরবানির ঈদের পর টানা ৯ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। বিপুল লোকসানে পড়ে পুঁজির নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী শেয়ার বিক্রি করে বড় লোকসান এড়াতে চাইছেন। কিন্তু ক্রেতাসংকটে শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
রবিবারও দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন হওয়া ৮৩ শতাংশ শেয়ার দর হারিয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২৪০ শেয়ারে একপর্যায়ে কোনো ক্রেতা পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতনে ডিএসইতে বড় দরপতন দেখা দিয়েছে। দরহ্রাসে সার্কিট ব্রেকারের ২ শতাংশ সীমার মধ্যেই গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচকটি ৭৪ পয়েন্ট হারিয়েছে। এ নিয়ে টানা ৯ কার্যদিবসে সূচকটি ৩১৪ পয়েন্ট হারিয়ে ৬০৫২ পয়েন্টে নেমেছে। টানা দরপতনের ফলে সূচকটি ফিরে গেছে ১৩ মাস আগের অবস্থানে। সূচকটির অবস্থান এর চেয়ে নিচে ছিল গত বছর ২৯ জুন, ৬০৪২ পয়েন্টে। গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩৮৬টি শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড ইউনিটের মধ্যে দর হারিয়েছে ৩১৯টির, বেড়েছে ৪৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির দর। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া সব খাতই বাজার মূলধন হারিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধন কমেছে সেবা ও নির্মাণ, কাগজ ও প্রকাশনা, ভ্রমণ, বিবিধ,জ্বালানি, সিমেন্ট, সিরামিকস, পাট, বীমা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাত। এসব খাতের শেয়ার বাজার মূলধন গতকাল ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।