বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
মাদারীপুর: করোনাভাইরাস সংক্রমন রোধে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ঔষধ,কাচামাল ও মুদি দোকান ছাড়া সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গণজমায়েত এবং লোকাল পরিবহন পরবর্তী নির্দেশ দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে করোনা প্রতিরোধে জরুরী সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন করোনার কারণে প্রয়োজনে শিবচর ও মাদারীপুর লকডাউন করা হবে। তিনি আরও বলেন, শিবচর ও মাদারীপুর ভালনারেবল। এ জেলায়ই করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে বেশি মানুষ এসেছে। সেখানেই বেশি নজরদারি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে লকডাউন করা হবে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনা ঝুঁকিতে শিবচরকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে করোনা প্রতিরোধে জরুরী সভার আয়োজন করে শিবচর উপজেলা প্রশাসন। জন-সমাগম এড়াতে সকল দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিবচরের গণ-পরিবহন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জরুরি সভায়। তবে ঔষধ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দোকান যথারীতি চালু থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসাদুজ্জামান জানান, যেহেতু শিবচর করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে তাই বৃহস্পতিবার সন্ধা ৭টা থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ২৪ঘণ্টা সবধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ও ফার্মেসি খোলা রাখা যাবে।
বিশেষ করে বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের নিজ বাড়িতে অবস্থান করার জন্য অনুরোধ জানান। শিবচর নন্দকুমার ইনস্টিটিউশনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন হিসেবে তৈরি রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকার যদি নির্দেশনা দেয় তাহলে প্রয়োজনে লকডাউন হতে পারে। জানা গেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে তিন শতাধিক প্রবাসী মাদারীপুর ফিরেছেন সাম্প্রতিক সময়ে । এদের বড় একটি অংশই এসেছেন করোনা আক্রান্ত দেশ ইতালি থেকে। বিদেশ ফেরত এসব লোকজন স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চলার কারনে ঝুঁকিতে পড়েছে পুরো মাদারীপুর জেলা। একটি বিশ^স্থ সূত্রের তথ্য মতে সারা দেশে মোট আক্রান্ত ১৭জন। এদের মধ্যে ৫জনই মাদারীপুরের বাসিন্দা। দুই ইতালি প্রবাসীর মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের মাঝে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
স্থানীয়দের দাবী, মাদারীপুরের ইতালি প্রবাসীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় করোনা ঝুঁকিতে উদ্বিগ্ন তারা। ইতালি ফেরত অনেক প্রবাসীই মানছেন না হোম কোয়ারেন্টাইন। নিজেদের ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াচ্ছেন ওই সকল প্রবাসীরা। তাছাড়া মসজিদে জামাতে নামাজও পড়ছেন। কেউ নিষেধ করলে তাদের সাথে করছেন অসদাচরণ।
করোনাভাইরাস আক্রান্তের আশঙ্কায় হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে বাইরে ঘোরাফেরার দায়ে মাদারীপুরে ২ প্রবাসীকে ২৫ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা, অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমান আদালত।
করোনার কারনে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম।
স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, মাদারীপুরে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় ২৪৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এছাড়াও ৪ জনকে রাখা হয়েছে আইসোলেশনে। মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মাদারীপুর ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের ১০০ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা ভাইরাস রোধে স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন সচেতনতা মূলক কাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, এক ইতালি প্রবাসী সম্প্রতি মাদারীপুরের শিবচরে আসেন। করোনাভাইরাসের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিলে তার স্ত্রী সন্তান, শাশুড়িসহ ৪ জনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এরা সবাই করোনা ভাইরাস বহন করছেন। এছাড়াও তার সন্তানরা যাদের সাথে সংস্পর্শে এসেছে এমন ১৯ শিক্ষার্থীকে চিহ্নত করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। মাদারীপুর সদর উপজেলার ইতালি প্রবাসী এক যুবক করোনাভাইরাস বহন করছিলেনে। আইইসিডিআর থেকে চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে তিনি সুস্থ্য হয়েছে বলে জানা গেছে।
এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় প্রতিটি ইউনিয়নের বিদেশ ফেরতদের তথ্য সংগ্রহ করে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। এরপরে যদি কেউ আদেশ অমান্য করে তাকে জেল-জরিমানা করা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।