সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় পৃথক দুই ধারায় এ কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ২৯ ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড ও পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা নুসরাতের পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে রায়ে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় প্রথম রায় এটা।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন। এর আগে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে কাশিমপুর কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে রায় ঘোষণার সময় ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হয়। বেলা ২টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেন এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। বেলা ২টা ১৭ মিনিটে ওসি মোয়াজ্জেমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। এর পর রায় পড়া শুরু করেন আদালত।
সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। এ বিষয়ে রাফিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে ধারণ করা ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। গত ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আজ ২৮ নভেম্বর রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
গত ১২ নভেম্বর মামলাটিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়। মামলাটিতে ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ১৪ নভেম্বর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন ওসি মোয়াজ্জেম। গত ১৫ এপ্রিল মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ মেয়েটিকে তার কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন বলে অভিযোগ উঠলে তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন অধ্যক্ষ এবং ছাত্রীকে থানায় নিয়ে যান। ওই সময় ওসি নিয়মবহির্ভূতভাবে জেরা করতে করতে অনুমতি ছাড়াই রাফির বক্তব্য ভিডিও করেন। পরবর্তীকালে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়।
মামলায় আরো বলা হয়, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিয়মবহির্ভূতভাবে অনুমতি ছাড়াই নুসরাত জাহান রাফির ভিডিও ধারণ করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করে এবং অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষা প্রয়োগ করে মানহানি করেছেন, যা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। মামলাটি তদন্ত করে ২৩ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এই প্রতিবেদন আমলে নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর ১৬ জুন মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
উল্লেখ্য, নুসরাত হত্যা মামলায় গত ২৪ অক্টোবর ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দিয়েছেন ফেনী আদালত।
ওসি মোয়াজ্জেমকে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনাকে মিডিয়া ট্রায়ালে সাজানো মামলায় সাজা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তার ভাই খন্দকার আরিফুজ্জামান। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাইবার ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি তিনি বলেন, ব্যারিস্টার সুমনের মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাজা দেয়া হয়েছে।
খন্দকার আরিফুজ্জামান বলেন, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনের মামলা করার এখতিয়ার নেই। তারপরও তার মিথ্যা ও সাজানো মামলায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে সাজা দেয়া হয়েছে। মিডিয়া ট্রায়ালের কারণে সাজানো মামলায় সাজা দেয়া হলো।
তিনি আরও বলেন, আমার ভাই ন্যায়বিচার পায়নি। উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে। আশা করছি, সেখানে ন্যায়বিচার পাবো।