Home কৃষি হাওরে জমির ধান নষ্ট : ছুটে গেল কৃষি অধিদপ্তর

হাওরে জমির ধান নষ্ট : ছুটে গেল কৃষি অধিদপ্তর

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কিশোরগঞ্জ : হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দুঃখ-কষ্ট শুনতে ও তাদেরকে শান্তনা দিতে কিশোরগঞ্জ গিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ।

বুধবার (৭ এপ্রিল) সকালে ক্ষতিগ্রস্ত ধানের মাঠ পরিদর্শন করছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

এসময় তার সফরসঙ্গী ছিলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেজবাউল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (ঢাকা অঞ্চল) মো. বশির আহম্মদ সরকার ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর মহাপরিচালক মো. শাহ্ জাহান কবির।

গত রবিবার ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টার মধ্যে হঠাৎ করে গরম বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় জমির ফসল পুড়ে গেছে কিশোরগঞ্জের জেলাসদরসহ হাওরাঞ্চলের ২৬ হাজার হেক্টও জমির ধান। স্থানীয়রা এটিকে ‘লু হাওয়া’ বলে অভিহিত করলেও আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, দেশে লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার কোনো নজির এখন পর্যন্ত নেই। তাছাড়া বাংলাদেশের আবহাওয়ায় লু হাওয়া বয়ে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কথা নয়।

কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার রায়টুটী ইউনিয়নের কৃষক পালন মিয়া বলেন, তিনি তার ছয় একর জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছিলেন। তিনি আশা করছিলেন এতে পাঁচশত মন ধান পাবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ধুলিস্মাৎ হয়ে গেছে, মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে।

একই এলাকার তলার হাওরের কৃষক আ. হেকিম কান্নার সুরে বলেন, ‘গেলবছর ধানের দাম বেশি পাইছি, হের লাইগ্যা এইবার আরো বেশি কইরে জমি করছি। জমির মইধ্যে ফসলও অইছিন বালা। কিন্তু গত রবিবার রাইতেই ১০ মিনিটের একটা গরম বাতাসে সব পুইড়ে ছারকার কইরে দিসে। আমার সত্তর বছর বয়সে এমন বাতাস দেখছি না। সহালে ঘুমেত্তে উইট্টে জমিতে গিয়া দেহি আমার সব শেষ। ঋণ কইরে জমি করছিলাম তা কি কওে পরিশোধ করবো আর পুলাপাইন লইয়া কি খাবো জানিনা।’

করিমগঞ্জের কনিকপুর গ্রামের বড় হাওরের কৃষক মন্নাছ মিয়া বলেন, আমি ঋণ কওে এক একর জমি করেছিলাম। এখন একটি ধানও জমিতে নেই। আমার সংসার কি কওে চালাবো আর কোথায় থেকে ঋণ পরিশোধ করবো। এখন আমার মরণ ছাড়া গতি নেই।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১৩টি উপজেলার হাওরে মাত্র ১০ মিনিটের গরম বাতাসে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর জমির ধান পুড়ে গেছে। বোরো ধানের জমি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে তিন হাজার ৪২৫ হেক্টর জমির। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির ধান।

কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসেবে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫৯৫ হেক্টর, হোসেনপুর ২৩০ হেক্টর, পাকুন্দিয়ায় ৭৪০ হেক্টর, কটিয়াধীতে ২৩০৩ হেক্টর, করিমগঞ্জে ৩৮০০ হেক্টর, তাড়াইলে ১৩৯৫ হেক্টর, ইটনায় ৪৭৫০ হেক্টর, মিঠামইনে ১৯৪০ হেক্টর, নিকলীতে ২৬৩৫ হেক্টর, অষ্টগ্রামে ৪৪০ হেক্টর, বাজিতপুরে ২৪০ হেক্টর, কুলিয়ারচরে ১১২ হেক্টর ও ভৈরবে ২৯০ হেক্টর জমির বোরো ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছাইফুল আলম জানান, ঘটনার পর দিনই আমি কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করেছি। বৃষ্টিবিহীন ঝড়ো বাতাসে এই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। হাওরের ধানের গাছগুলো এখন মিল্কিং স্টেজে (দুধ অবস্থায়) আছে। এই সময়ে প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার গরম বাতাসে ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলার করিমগঞ্জ, তাড়াইল ও ইটনা উপজেলাতে। এ বছর জেলায় ১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লক্ষাধিক মেট্রিক টন ধান এবং ৭ লাখ ১১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন চাল।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, আমি কৃষি বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ তালিকা হাতে পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য সহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন পাঠানো হবে।