বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার দিরাইর চাপতির হাওর, তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, এরালিয়ার হাওর, সুনামগঞ্জ সদরের কাংলার হাওর পাড়ের ফসলহারা কৃষকরা কাঁদছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল শনিবার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকটি হাওর ও বাঁধ এলাকা পরিদর্শন করে বলেছেন, সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে রয়েছে। তিনি ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাঁধ রক্ষায় সবাইকে সচেতেন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। আগাম বন্যার কবল থেকে হাওরের ফসল রক্ষায় সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে মন্ত্রী বলেন, হাওর রক্ষা বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোন প্রকার অনিয়ম সহ্য করা হবে না। তদন্তে প্রমাণ পেলে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত সপ্তাহে সিলেট ও সুনামগঞ্জে হাওর রক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঢলের পানির চাপে কেবল সুনামগঞ্জ জেলায় ৪ হাজার ৯শত হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে যায়। টাকার অংকে ৫০ কোটি টাকার ফসলহানি হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নিরুপায় কৃষকদের ডুবে যাওয়া কাঁচা অপরিপক্ক ধান কুড়িয়ে তুলতে দেখা গেছে দিরাইসহ কয়েকটি উপজেলার বেশ কয়েকটির হাওর পাড়ের গ্রামে। বৈশাখী বোরো ধান এই অঞ্চলের প্রধান ফসল। এটিকে ঘিরে সারা বছরের স্বপ্ন দেখেন কিষান-কিষানিরা। কিন্তু পাহাড়ি ঢলে তাদের সব স্বপ্ন ভেসে গেছে। তবে বড় বড় হাওরগুলো ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও এখনো অরক্ষিত রয়ে গেছে।
এদিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে-আবহাওয়ার এমন বার্তায় সিলেটের কৃষকদের মাথায় যেন নতুন করে বাজ পড়েছে। কারণ ধান পাকতে আরো ১৫ দিন বাকি।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে এখনো বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি চলছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি বাড়তে পারে। স্থানীয়রা বলছেন, নদ-নদীর পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়লে দুর্বল বাঁধগুলো ভেঙে পানি হাওরে প্রবেশ করে বোরো ধানের মাঠ তলিয়ে যেতে পারে ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম গতকাল তাহিরপুরের হাওর এলাকার বাঁধ পরিদর্শনকালে বলেন, হাওররক্ষা বাঁধ টিকিয়ে রাখতে জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তারা দিন রাত বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের ঢলে হাওরের সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসলে পানি প্রবেশ করে।
এ ব্যাপারে অধিদপ্তরের জেলার দায়িত্বে থাকা উপপরিচালক বিমল চন্দ্র বলেন, বাঁধগুলো দ্রুত মেরামত করা না গেলে ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া বলেছেন, এখন যেকোন সময় ভারী বৃষ্টি হয়ে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।