শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
তিন সুপারস্টার এক ছবিতে। তিনজনের একজন একটি ছবিতে থাকলেই সেই ছবির লক্ষ্মীলাভ বাঁধা থাকে। সেখানে তিনজনই এক ছবিতে। তাহলে তো সেই ছবি সুপারহিট হতে বাধ্য। শাহরুখ খান, মাধুরী দীক্ষিত ও সলমন খানকে নিয়ে ত্রিকোণ প্রেমের ছবি ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ । ২৪ মে ২০০২ রিলিজ করল ছবি। আজ তার দু’দশক পূর্ণ হল।
সে ছবি বক্সঅফিসে সাড়া ফেলা দূরের কথা, তিন সুপারস্টারের এই ছবি মুখ থুবড়ে পড়েছিল বক্সঅফিসে। ছবি ফ্লপ। যদিও শাহরুখ-সলমন-মাধুরীর ভক্ত সংখ্যা কম নয়। কিছু সংখ্যক ভক্ত সিনেমাহলে গিয়ে ছবিটি দেখছিল। তবে ছবিটি সেই অর্থে ব্যবসা করতে পারেনি। পরে বরং টেলিভিশনে ছবিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। যদিও ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ ছবির গান হিট করেছিল। বিশেষ করে ছবির শীর্ষসঙ্গীতে মাধুরী-শাহরুখের রোম্যান্স।
১৯৯৬ সালে প্রথম ভাবা এই ছবি করার কথা। তার পরে পরিচালক কে এস আদিয়ামান ছ’বছর ধরে তৈরি করেন এই ছবি । নানা টালবাহানায় ছবির কাজ পিছোচ্ছিল। এমন ভাবেই ছবি তৈরি হয়। তামিল ছবির অনুকরণে তৈরি হয় ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’-এর গল্প। তবে এর ট্রেলার রিলিজ হতেই ‘আপ কি কসম’ ছবির সঙ্গে মিল খুঁজে পায় দর্শক। শাহরুখ যেন রাজেশ খান্না, সলমন সঞ্জীব কুমার আর মাধুরী যেন মুমতাজ।
সব মিলিয়ে এ ছবির ফ্লপ ভাগ্য কেউ রুখতে পারেনি। ছবি ফ্লপের কারণ ছিল দুর্বল ও ক্লিশে চিত্রনাট্য। এ ধরনের চিত্রনাট্যের ছবি সত্তর দশকে হিট হতে পারে, ২০০২ সালে দাঁড়িয়ে নয়। বাজেটও ছিল বেশ কম। ছবির প্রযোজক অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিন স্টার তাঁর ছবিতে কাজ করে প্রযোজকের খারাপ সময়ে আলোর মুখ দেখিয়েছিলেন। ছবির কপিরাইট এবং মিউজিক অ্যালবাম ভাল আয় আনে।
শাহরুখ তখন মধ্যগগনে, মাধুরী কাজ করা কমিয়ে দিয়েছেন, সলমন বেছে কাজ করেন। এই তিন জনই শুধু নয়, ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’-এর একটি বিশেষ চরিত্রে ছিলেন ঐশ্বর্য রাইও। তখন সলমন-ঐশ্বর্য প্রেম তুঙ্গে। সেই কেমিস্ট্রিও ছবিকে হিট করাতে পারেনি।
গোড়ায় অবশ্য ছবির নাম ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ ছিল না। ছবির নাম ছিল ‘হাম আপকে হ্যায় সনম’। তখন তিনটি চরিত্রে কাস্ট করা হয় সানি দেওল, জুহি চাওলা এবং আমির খানকে। করিশ্মা কাপুরকে ভাবা হয় ঐশ্বর্য রাইয়ের অতিথি চরিত্রে। ছবিতে তখন ছ’জন সংগীত পরিচালক ছিলেন। নাদিম শ্রাবণ, বাপ্পি লাহিড়ি, নিখিল বিনয়, জয়দীপ ও ডাবু মালিক।
২০০২ সালে যখন ছবির কাজ শেষ হয়, তখন প্রযোজক ভাবেন ‘হাম আপকে হ্যায় সনম’ ছবির নামে অনেকটাই মিল আছে অতীতের ব্লকব্লাস্টার হিট ছবি ‘হাম আপকে হ্যায় কৌন’-এর সঙ্গে। তাই নাম বদলে হয় ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ (Hum Tumhare hey Sanam)।
সেই সময়েই মুক্তি পায় সঞ্জয় লীলা বনশালীর বিগ বাজেটের ছবি ‘দেবদাস’। যেখানে মাধুরী, শাহরুখ, ঐশ্বর্য আরও পরিণত ও ঝকঝকে। একই কাস্টিং। ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ যেহেতু ছ’বছর ধরে শ্যুটিং চলে এবং ছবি শ্যুটিংয়ের অনেক পরে মুক্তি পায়, তাই শাহরুখ, মাধুরী, ঐশ্বর্যর চেহারা প্রায় পাঁচ বছর আগের ছিল, বর্তমান সময়ের থেকে। ছবি ফ্লপের এটিও একটি কারণ।
গল্পের নতুনত্বও কিছু ছিল না। শাহরুখ-মাধুরীর সুখের সংসার এসে ছন্দপতন ঘটায় মাধুরীর বিয়ের আগের বন্ধু সলমন। ভুল বোঝাবুঝি নিয়ে মানভঞ্জনের গল্প। এটি একেবারে ক্লিক করে না বক্সঅফিসে। আর ছবিতে ঐশ্বর্য, সুমন রঙ্গনাথনের চরিত্রগুলো অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।
কিন্তু ইতিহাসে ‘হাম তুমহারে হ্যায় সনম’ ছবিটির গুরুত্ব কম নয়। শাহরুখ, মাধুরী, সলমনের প্রথম ও শেষ একসঙ্গে করা একমাত্র কাজ এই ছবি। ২০০২ সালে ছবিটি বেশ একটা নাইন্টিজ নস্টালজিয়াও তৈরি করেছিল। সে নস্টালজিয়া এখন অনেকেই ফিরে পাওয়ার জন্য টিভির পর্দায় দেখেন এই ছবি।