জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের ঠিক একবছর আগের ঘটনা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে চলেছে। তেড়েফুঁড়ে উঠে আগ্রাসী চেহারা নিয়েছে ভারতের স্বাধীনতার লড়াইও। বছর কয়েক আগেই বঙ্গভঙ্গ ঠেকাতে জ্বলে উঠেছিল গোটা বাঙালি সমাজ। মানুষের বুকে সে আগুন ধিকিধিকি জ্বলছে এখনও। এ অবস্থায় ১৯১৮ সাল নাগাদ কাশির ‘পানিশমেন্ট সেল’ থেকে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসা হল এক বিধবা মহিলাকে। অপরাধ- তথ্য বিলোপ ও পুলিশ অফিসারকে সাহায্য না করা সহ আরও একাধিক। ১৮১৮ সালের তিন নম্বর রেগুলেশনের ধারা প্রয়োগ হল তাঁর বিরুদ্ধে। জেরার নামে দিনের পর দিন চলল অকথ্য নির্যাতন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও বাঘের মতো তেজস্বিনী এই নারীর মুখ থেকে একটাও দরকারি তথ্য বের করতে পারেনি পুলিশ। জানেন কি, কে এই অগ্নিকন্যা? এই দৃঢ়চেতা বাঙালি বিধবা আর কেউ নন, তিনি বাংলার প্রথম মহিলা স্টেট প্রিজনার ননীবালা দেবী।
প্রেসিডেন্সি জেলে আনার পর খাওয়াদাওয়া একেবারে বন্ধ করে দিলেন ননীবালা। জেল-কর্তৃপক্ষ, এমনকি জেলা-ম্যাজিস্ট্রেটের হাজার চেষ্টা সত্ত্বেও একদানা খাবার খাওয়ানো গেল না তাঁকে। মহিলা তো নয়, যেন সাদা থান জড়ানো একটুকরো আগুন। অনুরোধ, উপরোধ, ভয় দেখানো, জেরা সবই ব্যর্থ হল। শেষমেশ একটা শর্তে খেতে রাজি হলেন তিনি। সে শর্তও ভারি অদ্ভুত!
প্রতিদিন সকাল ৯টা নাগাদ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হত গোয়েন্দা অফিসে ইলিসিয়াম রো-তে। সেখানে আই. বি. পুলিসের স্পেশাল সুপারিনটেন্ডেন্ট গোল্ডি সাহেব জেরা করত তাঁকে। টানা অনেকদিন অনশন করার পর একদিন তাঁকে ডেকে কিছুটা হুমকির সুরেই সুপারিনটেন্ডেন্ট বললেন
‘আপনাকে এখানে এই জেলেই থাকতে হবে, তাই বলুন কী করলে খাবেন?’
-‘যা চাইব তাই করবেন?’
-‘করব’
-‘আমাকে বাগবাজারে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের স্ত্রী সারদা মায়ের কাছে রেখে আসুন। তাহলে খাব।’
-‘আপনি দরখাস্ত লিখে দিন।’
কালবিলম্ব না করে তক্ষুণি দরখাস্ত লিখে দিলেন ননীবালা দেবী।
দরখাস্তে একবার চোখ বুলিয়ে মৃদু হাসলেন গোল্ডি। তারপর সেটা ছিঁড়ে দলা পাকিয়ে ছুঁড়ে ফেললেন বাতিল কাগজের টুকরিতে। মুহূর্তে ক্ষিপ্ত বাঘিনীর মতো গর্জে উঠলেন ননীবালা দেবী। জ্বলন্ত দুই চোখ নিয়ে লাফিয়ে উঠে এক চড় বসিয়ে দিলেন গোল্ডির মুখে। চিৎকার করে ওঠেন, ‘ছিঁড়ে ফেলবে তো আমায় দরখাস্ত লিখতে বলেছিলে কেন? আমাদের দেশের মানুষের কোনও মান সম্মান থাকতে নেই?”
দ্বিতীয় চড়টা মারবার আগেই অন্য সি.আই.ডি অফিসারেরা ধরে ফেলে তাঁকে। রাগে তখনও দুচোখ জ্বলছে দাবানলের মতো। বিধবা ননীবালার তেজ দেখে সেদিন বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছিলেন সবাই। জেলে তাঁর ওপর লাগাতার পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশন করে আছেন টানা একুশ দিন। তার মধ্যেও চলেছে অকথ্য নির্যাতন। অথচ তারপরও মনোবল অটুট, দুর্বলতার লক্ষণমাত্র নেই। ননীবালা দেবীর দৃঢ়তা আর আত্মত্যাগের গল্প এখানেই শেষ নয়। যদিও সেই ইতিহাস আজ ধুলিলুণ্ঠিত, মনে রাখেনি কেউ।ভারতীয় উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ননীবালা দেবী। ১৮৮৮ সালে হাওড়ার বালিতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম ছিল সূর্যকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মা গিরিবালা দেবী। সেই সময়ের সামাজিক রীতি মেনে ১৮৯৯ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে হয়ে যায়। দাম্পত্যজীবন কাকে বলে তা বুঝে ওঠার আগেই বিয়ের পাঁচ বছরের মাথায় ১৯০৪ সালে স্বামীকে হারান ননীবালা। এরপর আর ঠাঁই মেলেনি শ্বশুরবাড়িতে। বাধ্য হয়েই আবার বাবার কাছে ফিরে আসেন তিনি। পড়াশোনার ছোটবেলা থেকেই ভারি আগ্রহ ছিল। নিজের চেষ্টায় লেখাপড়া চালিয়ে যেতেও চেয়েছিলেন, কিন্তু বাধ সাধল রক্ষণশীল বাপের বাড়ি। তখনকার দিনে শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে আসা মেয়ে মানেই ছিল গলগ্রহ। তাঁর উপর ননীবালার প্রখর ব্যক্তিত্ব। সব মিলিয়ে তাঁর সঙ্গে পিত্রালয়ের সম্পর্ক ক্রমেই তিক্ত হতে থাকে। সেখানে স্নেহ নেই, সম্মান নেই সেখানে পড়ে থাকা অর্থহীন, তা ঐ কচিবয়সেই বুঝে গেছিলেন ননীবালা। পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে পথে নামেন তিনি। আশ্রয় নেন আড়িয়াদহ রামকৃষ্ণ মিশনে।সে এক অগ্নিযুগ। দেশ স্বাধীন করার মন্ত্র নিয়ে সশস্ত্র বিপ্লবীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সম্মুখ সমরে। দেশের জন্য প্রাণ দিতেও কুণ্ঠা নেই তাঁদের। গুপ্ত বিপ্লবী সংঘ গড়ে উঠছে দিকে দিকে। দেশকে ইংরেজদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য দলে দলে যোগ দিচ্ছে টগবগে রক্তের যুবক-যুবতীরা। ননীবালা দেবীও মনস্থির করলেন সশস্ত্র বিপ্লবে যোগ দেবেন। যুগান্তর দলের বিখ্যাত বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে ছিলেন ননীবালা দেবীর ভাইপো। তাঁর হাত ধরেই স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত হলেন ননীবালা। শুরু হল তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
কয়েকমাসের মধ্যেই ননীবালা হয়ে উঠলেন গুপ্ত বিপ্লবী সমিতির একজন নির্ভরযোগ্য সক্রিয় সহযোগী। দেশের কাজে হাতেখড়ির পর ১৯১৫ সালে তাঁর উপর দায়িত্ব পড়ে আলিপুর জেলে বন্দি বিপ্লবী রামচন্দ্র মজুমদারের কাছ থেকে গোপন তথ্য জেনে আসার। রামচন্দ্র মজুমদার যখন গ্রেফতার হন তখন একটা ‘মাউজার’ পিস্তল ছিল তাঁর সঙ্গে। সেটি তিনি কোথায় লুকিয়ে রেখে গেছেন সে কথা দলকে জানিয়ে যেতে পারেননি। সেসময় অস্ত্রের ভারি দরকার বিপ্লবীদের। আর তাই পুলিশের চোখ এড়িয়ে ননীবালা দেবীকে পাঠানো হল স্ত্রীর পরিচয়ে রামচন্দ্রের সঙ্গে দেখা করার জন্য। তখনকার দিনে একজন হিন্দু ঘরের বিধবার পক্ষে মাথায় সিঁদুর দিয়ে নকল স্ত্রী সেজে জেলে গিয়ে পুলিসের কড়া দৃষ্টিকে ফাঁকি দেওয়া ছিল প্রায় অকল্পনীয় ঘটনা। এভাবে কাজ হাসিল করার কথা কেউ চিন্তাও করতে পারত না। সাবলীল দক্ষতায় সেই অসাধ্যসাধন করে বসলেন ননীবালা দেবী।এরপরেও বিভিন্ন সময় পলাতক বিপ্লবীদের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে বিভিন্ন ছদ্মবেশ তিনি নিয়েছেন। ১৯১৫ সাল নাগাদ পুলিশের নজর এড়িয়ে বিপ্লবীদের আশ্রয় দিতে চন্দননগরে গোপনে একটি বাড়ি ভাড়া নেবেন বলে ঠিক করেন অমরেন্দ্রবাবু। সেই সময় পুলিশি হাঙ্গামার ভয়ে পরিবার না থাকলে বাড়ি ভাড়া দিতে চাইতেন না বাড়ির মালিকেরা। এযাত্রাও গৃহকর্ত্রীর ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন ননীবালা দেবী। যাদুগোপাল মুখার্জী, অমর চ্যাটার্জী, অতুল ঘোষ, ভোলানাথ চ্যাটার্জী, নলিনীকান্ত কর, বিনয়ভূষণ দত্ত, বিজয় চক্রবর্তীর মতো পলাতক বিপ্লবীরা সেসময় পুলিশের তাড়া খেয়ে তাঁরই আশ্রয়ে গাঢাকা দিয়েছেন দিনের পর দিন। এঁদের কাছ থেকে খবর বা অস্ত্র সংগ্রহ করে বাইরের বিপ্লবীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া আর বাইরে থেকে নানান রসদ জোগাড় করে এঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও ছিল ননীবালা দেবীর কাঁধে। তাঁর গোপন কার্যকলাপের সবটাই চলত রাতের অন্ধকারে।
কিন্তু শেষরক্ষা হল না। কিছু গুপ্তচর বা খোচরের মাধ্যমে চন্দনগরের সেই বাড়ির সন্ধান পেয়ে যায় পুলিশ। পুলিশি তল্লাসির খবর পাওয়া মাত্র সে আস্তানা ছেড়ে উধাও হয়ে যান দুঃসাহসী ননীবালা। তখনকার মতো পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তাঁর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেই সময় ননীবালার এক বাল্যবন্ধুর দাদা প্রবোধ মিত্র কার্যোপলক্ষে পেশোয়ার যাচ্ছিলেন। অনেক অনুরোধ উপরোধের পর তাঁকে রাজি করিয়ে প্রবোধ মিত্রের সঙ্গেই পেশোয়ার চলে যান ননীবালা। একজন অচেনা পুরুষের সঙ্গে একজন অনাত্মীয় নারীর এভাবে কয়েকহাজার কিলোমিটার পাড়ি দেওয়ার কথা ভাবাও যেত না তখন। সত্যিই অভাবনীয় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন সেদিন ননীবালা। পেশোয়ারে ছদ্মবেশে, ছদ্মনামে থাকলেও বেশ কয়েকদিন পর তাঁর সন্ধান পেয়ে যায় পুলিশ। ব্রিটিশ পুলিশবাহিনী যে সময় তাঁকে গ্রেফতার করতে পেশোয়ার পৌঁছয়, তখন ননীবালা দেবী কলেরায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত। মাথা তোলার মতো অবস্থা পর্যন্ত নেই। ওই অবস্থাতেই ওঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কয়েকদিন পেশোয়ারের হাজতে রাখার পর একটু সুস্থ হলে ননীবালা দেবীকে নিয়ে আসা হয় কাশীর জেলে। কাশীর জেলে আনার কিছুদিন পর থেকেই তাঁর উপর শুরু হয় অকথ্য অত্যাচার। নানাভাবে অত্যাচার করেও বিপ্লবীদের নিয়ে একটা গোপন কথাও বের করতে পারেননি শ্বেতাঙ্গ অফিসারেরা। সেসময় কাশীর জেলের দুঁদে পুলিশ সুপার ছিলেন বাঙালি অফিসার জিতেন ব্যানার্জি। ননীবালাকে কোনওভাবেই আয়ত্ত করতে না পেরে শেষে এক ভয়ানক অমানবিক পথ বেছে নেন তিনি, যা মনে করলে আজও গা শিউরে ওঠে। জিতেন ব্যনার্জির নির্দেশে একদিন দুজন জমাদারনি একটা আলাদা সেলে নিয়ে যায় ননীবালা দেবীকে। তারপর তাঁকে জোর করে ধরে মাটিতে ফেলে তাঁর গায়ের সমস্ত কাপড় খুলে নিয়ে দু’বাটি লংকাবাটা ওঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘষে দেওয়া হয়। অসম্ভব জ্বালায় ছটফট করতে থাকেন ননীবালা দেবী। তাঁর দুপা একজন চেপে ধরে থাকায় নড়াচড়ার উপায়টুকুও ছিল না। তার মধ্যেও সর্বশক্তি প্রয়োগ করে লাথি মারতে চেষ্টা করেন। চিৎকার নয়, তাঁর মুখ দিয়ে বেরোচ্ছিল আহত সিংহীর চাপা গর্জন। এভাবেই দিনের পর দিন চলতে থাকে পৈশাচিক অত্যাচার। কিন্ত হাজার চেষ্টা করেও বিপ্লবীদের ব্যাপারে একটা তথ্যও কেউ বের করতে পারেনি তাঁর মুখ থেকে। কাশীর জেলে মাটির নীচে একটা আলো-বাতাসহীন অন্ধকার সেলে তালাবন্ধ করে আটকে রাখা হত ননীবালা দেবীকে। সেখানেই প্রতিদিন তাঁর উপর অমানবিক নির্যাতন চালাতেন সাদা চামড়ার পুলিশেরা। একদিন সেই গোপন সেল খুলে দেখা গেল ননীবালা দেবী অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। শরীরে প্রাণের লক্ষণ নেই বললেই চলে।ততদিনে হাল ছেড়ে দিয়েছে কাশীর পুলিশ। ক্রমাগত পুলিশের অত্যাচারে ননীবালা দেবীর শরীরও একেবারে ভেঙে পড়েছিল সেসময়। বিপদের গন্ধ পেয়ে কাশীর জেল থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে। প্রেসিডেন্সি জেলে আসার পর তাঁর উপর দিনের পর দিন চলা পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে টানা অনশন শুরু করেন ননীবালা। একদিন দুদিন নয় টানা একুশ দিন না খেয়ে কাটিয়েছিলেন তিনি।
দু’বছর এইভাবে বন্দিজীবন কাটানোর পর ১৯১৯ সাল নাগাদ ননীবালা দেবীর মুক্তির আদেশ এল। কিন্তু তিনি যাবেন কোথায়? অসুস্থ, ভগ্নস্বাস্থ্য ননীবালা দেবীর তখন মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। নিজের বাড়ি, আত্মীয়স্বজন বহুদিন আগেই দূরে সরে গেছে। তবুও আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই জেনে নিজের পৈতৃক বাড়িতেই ফিরে গেলেন তিনি। কিন্তু বাবা-মা’র কাছেও ঠাই জুটল না ননীবালার। প্রথমত পুলিশের ভয়, তাছাড়া বিধবা হয়েও পরস্ত্রী সাজা, পরপুরুষের সঙ্গে একঘরে থাকা, পেশোয়ার যাওয়া, এইসব কারণে সেই সময়ের সমাজেও প্রায় অচ্ছুৎ হয়ে গেছেন ননীবালা। তাঁর নিজের বাড়ির লোকেরা পর্যন্ত মেনে নেয়নি তাঁকে। তাড়িয়ে দিয়েছে দূর দূর করে।
রাগে দুঃখে আবার ঘর ছাড়লেন ননীবালা। তাঁর চেনাজানা বিপ্লবী সংগঠনগুলোও ততদিনে ছারখার হয়ে গেছে ব্রিটিশ পুলিশের অত্যাচারে। সহকর্মীদের অনেকেই মৃত। কেউ কেউ পচে মরছে কারাগারে। এ অবস্থায় কোনও এক পূর্বপরিচিতের অনুগ্রহে একটি কুঁড়েঘর ভাড়া করে হুগলিতে থাকতে শুরু করেন ননীবালা। সুতো কেটে, রান্নার কাজ করে কোনওমতে আধপেটা খেয়ে দিন চলত তাঁর। সমাজ এবং নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে রাগে, দুঃখে, অপমানে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। শেষের দিকে নিজেকে একপ্রকার নির্বাসিতই করেছিলেন। দেশের কাজে যিনি আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিলেন, বিলিয়ে দিয়েছিলেন নিজেকে, শেষজীবনে তাঁর খবর নেবার প্রয়োজনটুকু মনে করেনি কেউ। ১৯৬৭ সালের মে মাসে নিঃশব্দে অনেক অভিমান নিয়ে চিরতরে বিদায় নেন তিনি। তাঁর আজীবনের সংগ্রাম মনে রাখেনি ইতিহাস। এমনকি জন্মদিন, মৃত্যুদিন পর্যন্ত লেখা হয়নি ক্যালেন্ডারের পাতায়। তবু ইতিহাসপ্রেমী বাঙালির মনের মণিকোঠায় এই মহীয়সী থেকে যাবেন চিরদিন।