*অনলাইন প্লাটফর্মে নতুন উদ্যোক্তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি
*অনলাইনে গরু বেচা-কেনার সুযোগ করে দিচ্ছি: জেলা প্রশাসক
*কোরবানির গরুর সংকট হবে না: রিয়াজুল হক
*অনলাইন প্লাটফর্মে গরু বেচা-কেনায় ঠকে যাওয়ার সুযোগ কম: ক্রেতা
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: দু’সপ্তাহও বাকি নেই কোরবানি ঈদের। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের সময় বাড়ানো হয়েছে ১৪ জুলাই পর্যন্ত।
এই প্রেক্ষাপটে নগরীতে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সংক্রমণের ভয়ে অনেকেই হাটে যেতে চান না। অনলাইনে পছন্দের কোরবানির পশু কিনে নিচ্ছেন। খামারিরাও অনলাইনে গরু বিক্রির কথা প্রচার করছেন। এতে নতুন উদ্যোক্তার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
অনলাইনে পশুর হাট প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, গেল বছরের মতোই এবারও কোরবানিদাতাদের হাটে না গিয়ে খামার অথবা অনলাইনে গরু কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করছি। যেসব অনলাইন প্লাটফর্ম আগে থেকে ছিল, সেগুলোকে সমন্বয় করে আমরা অনলাইনে গরু বেচা-কেনার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছি। অন্যদিকে কিছু খামারি নিজ উদ্যোগে অনলাইনে গরু বেচা-কেনা করছেন। তারা ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইটে গরুর ছবি দিয়ে গরু বিক্রি করছেন।
নগরীতে এবার শতাধিক খামারি অনলাইনেই কোরবানির পশু বিক্রি করছেন। খামারিরা ফেসবুক ভিত্তিক বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপে পশুর ছবি পোস্ট করেন, সঙ্গে ওজন ও দামও লিখে দেন। তারপর ক্রেতাদের পছন্দ হলে মুঠোফোনে কথা বলে সরাসরি খামারে এসে পছন্দের গরু কিনছেন। অনলাইনের এই হাটে কোনও ঝক্কিঝামেলা নেই।
কিছু মৌসুমী ব্যবসায়ীও এবার হাটে গরু তোলার পাশাপাশি অনলাইনে গরু বিক্রি করার কথাই ভাবছেন। এই হাটের পরিসর এবার আগের চেয়ে বেড়েছে, বেড়েছে জনপ্রিয়তাও। নগরীর চৌমুহনী এলাকার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী নজরুল করিম বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, প্রত্যেক বছর পশুর হাটে গিয়ে কোরবানির গরু কিনতাম। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি হাটে না গিয়ে অনলাইনে গরু কিনবো। করোনাভাইরাসের কারণেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনলাইনে একটি গরু ঠিক করেছি। ফার্মে অনলাইনের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবে মিল থাকলে কিনে নিয়ে আসবো।
তিনি আরও বলেন, অনলাইনে গরু কিনলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ কম। কারণ, বিক্রেতারা গরু ওজন করে তারপর দাম ঠিক করেন। কিন্তু, হাটে গেলে আইডিয়া করে কিনতে হয়। এই ক্ষেত্রে আইডিয়া ঠিক না হলে ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু অনলাইন প্লাটফর্মে তাই ঠকে যাওয়ার সুযোগ নেই।
জানা যায়, অনলাইনে গরু বিক্রির ক্ষেত্রে ডিজিটাল মেশিনে প্রথমে গরু মাপা হয়। তারপর গরুর কালার লাল হলে কেজি প্রতি ৬২০ টাকা ও কালো বা অন্য কালার হলে ৪৭০ থেকে ৫৫০ টাকা হিসাব করে গরু বিক্রি করা হয়। ছোট থেকে মাঝারি সাইজের গরু এভাবেই বিক্রি করছেন। কিন্তু, যেসব গরু সাইজে বড় এবং দেখতে সুন্দর সেগুলোর দাম কেজিতে নির্ধারিত হয় না। এই ক্ষেত্রে গরুর সৌন্দর্য দেখে দাম নির্ধারণ করা হয়।
নগরীর পতেঙ্গা এলাকার পতেঙ্গা ডেইরি ফার্মের মালিক মো. নুর নবী বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, খামারে ২শ টির মতো গরু ছিল। ইতোমধ্যে ৪৫টির মতো গরু বিক্রি হয়ে গেছে। ফেসবুকে পোস্ট দেখে গরুগুলো কিনে নিয়ে গেছেন ক্রেতারা। আমার খামারে ১০ মন ওজনের একটি ষাঁড় আছে। অনলাইনে এটি পোস্ট করার পর খুব সাড়া পাচ্ছি। ইতোমধ্যে ওই ষাঁড়টির দাম ৫ লাখ উঠেছে। উপযুক্ত দাম পেলে গরুটি বিক্রি করে দেবো।
জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রিয়াজুল হক বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনায় বেশ সাড়া পড়েছে। সামনে বিক্রি আরো বাড়বে। এবার বাজারে কোরবানির গরুর সংকট হবে না। এ পর্যন্ত চট্টগ্রামে অনলাইনে ৩৭ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। লকডাউনের কারণে ক্রেতারা বেশি সাড়া দিচ্ছে। আবার খামারিরাও বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যমে ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।
তবে গত বছর অনলাইনে বেচাকেনায় বেশ কিছু প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। বিকাশে গরু বিক্রির টাকা নিয়ে পরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এতে ক্রেতারা অনলাইনে পশু কেনা নিয়ে সতর্ক রয়েছে বলে জানান তিনি।
নগরীতে এবার স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে ছয়টি কোরবানির পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে প্রশাসন। করোনার কারণে এসব হাটে পশু বিক্রি নিয়ে নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আবার কোরবানির বাজার নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে। বাজারে পর্যাপ্ত গরু পাওয়া যাবে কি না, নাকি গত বছরের মতো শেষ বাজারে গরুর সংকট দেখা দেবে তা নিয়ে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে।
খামারিরা জানান, ক্রেতারা অনলাইনে গরুর খবরাখবর নিচ্ছে। তারাও ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। ইতিমধ্যে প্রচুর গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
খামারি সাইফুল আলম বলেন, অনলাইনে ইতিমধ্যে ১২টি বিক্রি করেছি। ক্রেতারা যোগাযোগ করছে। আশা করি, বাকিগুলো বিক্রি হয়ে যাবে। কোরবানির হাটে নিতে হবে না।’
নগরীর অন্যতম সাগরিকা পশুর হাট আর বিবিরহাট গরু বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। গেল বছরগুলোর তুলনায় এবার অনেক কম ব্যাপারি বাজারে গরু আনছেন। যে কয়েকজন ব্যাপারি গরু এনেছেন তারাও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। কারণ, এবার বাজারে ক্রেতার আনাগোনা কম। এখনও বিক্রি শুরু করতে পারেনি অনেক ব্যাপারি।