বিজনেসটুডে২ি৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: জিডিপির বিপরীতে কর আদায়ে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। সরকারের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে ২০১৬-২০ পাঁচ বছরের কর-জিডিপির অনুপাত গড়ে ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ দেখানো হয়। তাই জিডিপির তুলনায় কর আদায় বাড়াতে শুল্কহার যৌক্তিক করার প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ প্রস্তাব দেয় সফররত আইএমএফ একটি প্রতিনিধিদল।
সূত্র জানায়, বর্তমানে গড় শুল্ক ১৪ শতাংশ। এ হার একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এ ছাড়াও মধ্য মেয়াদে (২০২৩-২৫ অর্থবছরে) তৈরি পোশাক, নন-তৈরি পোশাক, রপ্তানির প্রজেকশন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার সুবিধা ও রপ্তানি, তৈরি পোশাক রপ্তানি একক খাত নির্ভরতা কমিয়ে বহুমুখীকরণ, আঞ্চলিক ও মুক্তবাণিজ্য চুক্তি, শুল্কহারের যৌক্তিকতা নিয়ে বিশ^বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) বাধা সম্পর্কে আলোচনা করেছে প্রতিনিধিদল।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা দেখতে চায়। ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বৈশ্বিক বাস্তবতায় নানারকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আগে থেকেই করণীয় নির্ধারণ করলে উন্নয়নশীল অবস্থান টেকসই হবে না। এ জন্য সরকারের কী ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে, সেটাও জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদকদের সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে ডব্লিউটিওর বাউন্ড রেটের অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করেছে। এই ট্যারিফ রেট ডব্লিউটিওর বাউন্ড রেট অনুযায়ী নামিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনাও তারা জানতে চেয়েছে।
বৈঠকে সংস্থাটির প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ দিয়ে আরও বলেছে, বৈশ্বিক সংকটে মানুষের ভোগ ও ব্যবহার চাহিদা দুটোই কমতে শুরু করেছে। এটা দীর্ঘায়িত হতে পারে। আইএমএফ মনে করে, একক রপ্তানি পণ্য হিসেবে তৈরি পোশাকের ওপর রপ্তানি আয়ের অতি নির্ভরতা বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে। এ অবস্থায় রপ্তানি ঝুঁকি কমাতে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পণ্যের বহুমুখীকরণে সুনির্দিষ্ট পণ্যভিত্তিক কী ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে সেটিও জানতে চেয়েছে।
তেল-গ্যাস সংকটে লোডশেডিং আইএমএফ প্রতিনিধিদল গতকাল বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বৈঠকে বর্তমান লোডশেডিংসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে আইএমএফ প্রতিনিধিদলকে জানানো হয়, বিষয়টি জ্বালানি বিভাগের ওপর নির্ভর করে। জ্বালানি বিভাগ জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখলে কোনো লোডশেডিং হবে না। কিন্তু বিশে^ গ্যাস এবং তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকার কারণে জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। ফলে এখন লোডশেডিং হচ্ছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার নিয়ে আলোচনা করে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্প্রসারণ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চায়। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তবে বাংলাদেশে ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ব্যাপক আকারে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সম্প্রসারণের সম্ভাবনা কম, এমন ধারণা তাদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে বিদ্যুৎ কেনার ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট পরিশোধসংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সংকটকালীন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো স্থাপন করা হয়েছে। তখন বেসরকারি মালিকানাধীন ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ক্যাপাসিটি পেমেন্টসংক্রান্ত চুক্তি ছিল। চুক্তির আলোকে তাদের ক্যাপাসিটি পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে। তবে এখন এসব চুক্তি থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ‘নো ইলেকট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ ভিত্তিতে চুক্তি করা হয়েছে। অর্থাৎ বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তারা কোনো পেমেন্ট পাবে না।