আইপিও শেয়ারের ১৫ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্টে বিক্রির সুযোগ
শেয়ার বাজারে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তালিকাভুক্ত হতে হলে কোম্পানিগুলোকে পরিশোধিত মূলধনের ন্যূনতম ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। আইপিও পরবর্তী সময়ে যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, সেসব কোম্পানিকে ন্যূনতম পরিমাণের ওই শেয়ার ছাড়তে হবে। এছাড়া আইপিওতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি অনিবাসী বাংলাদেশিদের (এনআরবি) জন্য সংরক্ষিত কোটা কমিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে এমন প্রথা আরোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি), যা গতকাল প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়েছে।
আগে স্থিরমূল্য পদ্ধতির আইপিওতে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন আইপিও পরবর্তী অন্তত ৫০ কোটি টাকা থাকার বাধ্যবাধকতা ছিল। এছাড়া কোম্পানির মোট শেয়ারের ন্যূনতম ১০ শতাংশ কিংবা ৩০ কোটি টাকার মধ্যে যেটা বেশি হয়, সে পরিমাণের শেয়ার ছাড়ার বিধান ছিল। আর বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আগে ন্যূনতম ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার ছাড়তে হতো। তবে পাবলিক ইস্যু বিধিমালার নতুন সংশোধনীতে আইপিও আবেদনকারী কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে শেয়ার ছাড়ার পদ্ধতি আরোপ করা হয়েছে।
সংশোধনীতে স্থিরমূল্য ও বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির ক্ষেত্রে আইপিও পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত উন্নীত হবে, সেসব কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। এছাড়া আইপিও পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৭৫ কোটি টাকার বেশি কিন্তু ১৫০ কোটি টাকার কম, সেসব কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধনের অন্তত ২০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে। আর আইপিও পরবর্তী যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকার বেশি হবে, আইপিওতে সেসব কোম্পানিকে অন্তত ১০ শতাংশ শেয়ার ছাড়তে হবে।
এছাড়া পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের মাধ্যমে কোনো কোম্পানি আইপিও আবেদনের পূর্ববর্তী দুই বছরে বোনাস শেয়ার ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে না বলে শর্তারোপ করা হয়েছে। তবে আইপিও অনুমোদনের পর কোম্পানিগুলো চাইলে আইপিও শেয়ারের ১৫ শতাংশ প্রাইভেট প্লেসমেন্টে বিক্রি করতে পারবে।
এদিকে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানো হয়েছে পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনীতে। এখন থেকে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিগুলো যে পরিমাণের শেয়ার ছাড়বে, তার ৭০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। বর্তমান পাবলিক ইস্যু বিধিমালা অনুসারে স্থিরমূল্যে আইপিওতে আসা কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ থাকে, যার ১০ শতাংশ আবার এনআরবিদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হয়। আর এই পদ্ধতিতে আসা আইপিও শেয়ারের মধ্যে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৩০ শতাংশ ও মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য ১০ শতাংশ বরাদ্দ থাকে। বিধিমালাটি সংশোধন করে প্রাতিষ্ঠানিকের পাশাপাশি এনআরবিদের সংরক্ষিত আইপিও কোটার পরিমাণ কমানো হয়েছে।
সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী, স্থিরমূল্য পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির আইপিও শেয়ারের ৭০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে। আগে এনআরবিদের আইপিও কোটা ১০ শতাংশ রাখা হলেও এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বরাদ্দকৃত কোটা ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। আর মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য সংরক্ষিত কোটা ৫ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অবশ্য মিউচুয়াল ফান্ডের কোটা থেকে ১ শতাংশ এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের জন্য।
বর্তমান বিধিমালায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানির শেয়ারে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ, এনআরবি ১০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০ শতাংশ করে শেয়ার বরাদ্দ থাকে। সংশোধিত বিধিমালায় যোগ্য বিনিয়োগকারীদের (মিউচুয়াল ফান্ডসহ) বর্তমান কোটা ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ, এনআরবি কোটা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কোটার মধ্যেও ইটিএফ পরিচালনাকারী সম্পদ ব্যবস্থাপকদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সংরক্ষিত কোটা ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। মূলত আইপিওতে আবেদনকারী যাতে কিছুটা বেশি শেয়ার পান, তা নিশ্চিতেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোটা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে কমিশন। এছাড়া আইপিও আবেদনকারী কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ব্যাংক স্টেটমেন্টও জমা দিতে হবে।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক