দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন আজ
ঢাকা:দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন আজ ২৪ ডিসেম্বর। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইতিমধ্যে সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবারের সম্মেলনে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার প্রত্যয় তুলে ধরা হবে। এ বিষয়টি সামনে রেখেই সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে ‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়’।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে দলে বড় পরিসরে পরিবর্তনের ঝুঁকিতে যাবে না ক্ষমতাসীন দল। নির্বাচনের এক বছর আগে এটা করে দল গোছানো সহজতর হবে না বলে তারা মনে করেন। অবশ্য ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বিতর্কিতদের ছেঁটে ফেলতে পারে। এটা সম্ভব হলে আওয়ামী লীগের জন্য ভালোই হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এবারের সম্মেলন ঘিরে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি। কারণ, সকলেই জানেন, এই মুহূর্তে সভাপতি পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই। সভাপতি পদ নিয়ে কেউ কোনো ভাবনা চিন্তা করছেন না। তবে সাধারন সম্পাদক পদ নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। কেউ কেউ বলছেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ কোনো ‘রিস্ক’ নেবে না। সাধারন সম্পাদক পদে দলীয় সভানেত্রী কোনো পরিবর্তন আনবেন না। আবার অনেকেই বলছেন, বিভিন্ন বক্তব্যের কারনে সারাদেশে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। এজন্য এপদে পরিবর্তন আসন্ন।
তবে, সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব বদলালেও আওয়ামী লীগেই থাকবেন এবং দলের জন্য কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনে সাফলতা আছে, ভুল ত্রুটিও আছে এবং এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নেবেন বলেও তিনি জানান।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা জানান। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে দুই মেয়াদে সাধারণ সম্পদকের দায়িত্ব পালনে নিজের সফলতা-ব্যর্থতার মূল্যায়ন সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, কাজ করতে গেলে, আই অ্যাম নট প্যারফেক্ট লিডার এবং আমি মনে করি ভুল ত্রুটি তো থাকবেই। সাফল্য আছে, ভুল ত্রুটিও আছে। তবে, প্যান্ডামিকের জন্য আমরা একটা বছর কাজ করতে পরিনি। এর ভেতরও সহকর্মীরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন, কাজ করেছেন। আমরা নিস্ক্রীয় ছিলাম না। আমি মনে করি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবাষির্কী উদযাপন আমাদের সব চেয়ে বড় সাফল্য। উপজেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে অনেকদিন পর সবচেয়ে বেশি সম্মেলন হয়েছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রুলিং পার্টি, একাধারে ১৪ বছর ক্ষমতায়। রুলিং পার্টির কিছু সমস্যা থাকে। আজ কেউ আছেন, তিনি আবারও থাকতে চাইবেন। আবার নতুন কারো আকাঙ্খা থাকতে পারে। অনেক সময় দুই আকাঙ্খার মধ্যে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়, সেটাকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া থাকে। এই বিষয়টা পৃথিবীর সব দেশেই আছে, আমাদের এখানেও আছে। এসব আছে, ছোট সমস্যা আছে। মূল্যায়ন, কাজ করতে গেলে ভুল ত্রুটি হবেই। আই এম নট পার্ফেক্ট লিডার। আমি মনে করি একেবারে পারফেক্ট হওয়া খুবই অসম্ভব। ভুলত্রুটি তো থাকবেই। তবে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষাও নেব, যেখানে ভুল আছে আমরা সম্মিলিতভাবে আগামীতে চেষ্টাও করব। কে, কোন দায়িত্বে সেটা ব্যাপার না। দায়িত্ব বদলালেও তো আমরা এই দলেই আছি। দলের কাজই করব।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ তার স্বকীয় ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রতি তরুণ, নারীদের আকর্ষণ আগের চেয়েও বেড়েছে। আগে আমার এলাকায় দশজন নারীকে পাবলিক মিটিংয়ে দেখিনি, এখন শত শত নারীকে দেখা যায়। এটা সারা বাংলাদেশে। তরুণদের এখন স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ৭৮টি সাংগঠনিকের জেলার নেতারা জেলার পতাকা উত্তোলন করবেন। এরপর বেলুন ও কবুতর উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় দলীয় সংগীত পরিবেশন করা হবে। তারপর শুরু হবে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের কাজ। প্রথম অধিবেশন শেষে দুপুরের পর দ্বিতীয় অর্থাৎ কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, শাজাহান খান, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোাজম্মেল হক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসিম কুমার উকিল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, শিক্ষা ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সম্পাদক শামসুর নাহার চাপা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য পারভীর জামান কল্পনা, সৈয়দ আব্দুল আউয়াল শামীম প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে আসার পর আধঘণ্টা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া। সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করবেন ওবায়দুল কাদের।
স্বাগত বক্তব্য দেবেন অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম। শেখ হাসিনার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হবে। এবারের জাতীয় সম্মেলনে সারাদেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার কাউন্সিলর এবং লক্ষাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেবেন।
পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে শুরু হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই অধিবেশনে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হবে। দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে।
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় প্রসঙ্গে সম্মেলনস্থল পরিদর্শনে গিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই একটি স্মার্ট দল। আওয়ামী লীগই সবসময় প্রথমেভাবে জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কি করতে হবে। আওয়ামী লীগের হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশও আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হবে।