বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বিশ্বের বৃহত্তম রঙের উত্সব দোল বা হোলি। বাংলায় এটি দোলযাত্রা, দোল পূর্ণিমা বা দোল উত্সব নামে পরিচিত। তবে ভারতের অন্যত্র বেশিরভাগ জায়গাতেই রঙের উত্সবকে হোলি বলা হয়। সবার রঙে রঙ মেলাবার দিন এটি।
দোল ও হোলির মধ্যে একদিনের পার্থক্য থাকে। বাঙালিরা যেদিন দোল খেলেন তার পরের দিন হোলি পালিত হয়। একই উত্সব, একই রীতি রেওয়াজ, তবে ভিন্ন ভিন্ন দিনে। কেন একই উত্সব এক দিন আগে পরে উদযাপিত হয়, তা জানেন কি?
এর কারণ দোল ও হোলি পালনের যে মূল উত্স্য কথা সেটিই আলাদা। দোলযাত্রা বা দোল পূর্ণিমা পালিত হয় রাধা ও কৃষ্ণের প্রেমের কাহিনির ওপর ভিত্তি করে। আর হোলি পালন করা হয় নৃসিংহ অবতারের হাতে হিরণ্যকশিপু বধ হওয়ার যে পৌরাণিক কাহিনি, তার ওপর ভিত্তি করে।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল শ্রীকৃষ্ণ এবং নৃসিংহ অবতার উভয়ই ভগবান বিষ্ণুর অবতার। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা রাতের পরের দিন দোল উত্সব পালন করা হয়। মনে করা হয় এদিনেই রাধা ও তাঁর সখীরা দল বেঁধে রং খেলায় মেতে উঠেছিলেন। সুগন্ধি ফুলের কুড়ির রং তাঁর মুখে মাখিয়ে কৃষ্ণ। সেদিনই কৃষ্ণ রাধার প্রতি তাঁর প্রেম নিবেদন করেছিলেন বলে মনে করা হয়।
অন্যদিকে পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন পরম বিষ্ণুভক্ত। সেই কারণে প্রহ্লাদকে হত্যা করার জন্য হিরণ্যকশিপুর বোন হোলিকা প্রহ্লাদকে আগুনে নিক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেন।
বিষ্ণুর কৃপায় আগুন প্রহ্লাদকে স্পর্শ করতে না পারলেও সেই আগুনে পুড়ে মারা যান হোলিকা। তার হোলি হল অশুভ শক্তির পরাজয় ও শুভ শক্তির জয়ের প্রতীক। তাই হোলির আগের দিন হোলিকা দহন পালন করা হয়। দোলের আগের দিন বাঙালিরাও ন্যাড়া পোড়া বা বুড়ির ঘর পোড়ানো পান করেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দোল পূর্ণিমা আজ রবিবার (২৮ মার্চ)। এ উপলক্ষে রবিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে পূজা, হোম যজ্ঞ, প্রসাদ বিতরণসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দোল উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এ বছর উৎসবটি শুধু পূজা, হোম যজ্ঞ, ও প্রসাদ বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
দোলযাত্রা হিন্দু বৈষ্ণবদের উৎসব। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, এ দিন শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে রাধা এবং তার সখীদের সঙ্গে আবির খেলেছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই দোল খেলার উৎপত্তি। এ কারণে দোলযাত্রার দিন এ মতের বিশ্বাসীরা রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ আবিরে রাঙিয়ে দোলায় চড়িয়ে নগর কীর্তনে বের হন। এ সময় তারা রং খেলার আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিশ্বের অনেক স্থানে উৎসবটি শ্রীকৃষ্ণের দোলযাত্রা নামে অধিক পরিচিত হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মাদ্রাজ, উড়িষ্যা প্রভৃতি স্থানে দোল উৎসব এবং উত্তর, পশ্চিম ও মধ্য ভারত ও নেপালে ‘হোলি’ নামে পরিচিত।
কোনও কোনও স্থানে এ উৎসবকে বসন্ত উৎসবও বলা হয়। দ্বাপর যুগ থেকে পুষ্পরেণু ছিটিয়ে রাধা-কৃষ্ণ দোল উৎসব করতেন। সময়ের বিবর্তনে পুষ্পরেণুর জায়গায় এসেছে আবির।
সারাদেশে সকাল থেকে শুরু হয়ে বিকাল পর্যন্ত এ উৎসব চলবে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পরস্পরকে আবির মাখিয়ে এ উৎসব উদযাপন করবেন। এদিকে দোল পূর্ণিমার দিনে হেফাজত ইসলাম আহুত হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।