Home কৃষি আনারসের গ্রাম রাবান

আনারসের গ্রাম রাবান

ঘোড়াশাল আনারস


সাইফুল ইসলাম রুদ্র

নরসিংদী: পলাশ উপজেলার প্রাচীন গ্রাম ‘রাবান’। এই গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রাচীন ব্রহ্মপুত্র নদ। আর পশ্চিম দিকে প্রবহমান শীতলক্ষ্যা। টিলা-টেকর আর গাছগাছালিতে ঘেরা গ্রামটি ছবির মতো সুন্দর।
জানা যায়, দেশে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে আনারসের চাষাবাদ শুরু হয়েছিল এই গ্রাম থেকে। পরবর্তীকালে তা আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে, যা দেশব্যাপী ‘ঘোড়াশাল আনারস’ নামে খ্যাতি পায়। মূলত এই ঘোড়াশাল আনারসের গোড়াপত্তন হয়েছিল রাবানের আনারস থেকে।

অতীতে রাবান ও আশপাশের গ্রামগুলোতে ‘ডোয়াই’ নামের একটি উপজাতির বাস ছিল। তাদের হাতেই রাবান ব্যান্ড খ্যাত আনারসের চাষাবাদ শুর হয়েছিল। আনারস, কাঁঠাল, পেয়ারা, লটকন প্রভৃতির পাশাপাশি তারা বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বিক্রি করত। ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত ‘ঘোড়াশাল কাহিনী’ ইতিহাস গ্রন্থে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।


পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের রাবান, বরাব, সাতটেকিয়া, কুড়াইতলীসহ আরো কয়েকটি গ্রামে আনারসের চাষ হয়ে থাকে। চলতি বছর রাবানে ১৪৫ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ৩ হেক্টর বেশি। প্রতি হেক্টরে ১২ টন আনারসের ফলন হয়েছে। রাবানে চলতি বছর ১ হাজার ৭৪০ মেট্রিক টন আনারসের ফলন হয়েছে। বাজারে রাবানের আনারসের চাহিদা থাকায় এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষের পরিধিও বেড়েছে।

রাবানে প্রায় পাঁচ শতাধিক চাষি আনারস চাষ করে থাকেন। আনারস চাষি অসিম কুমার পাল বলেন, এবার আমি আধাবিঘা জমিতে আনারস চাষ করেছি। আনারসের ফলনও ভালো হয়েছে। বাজারে দামও ভালো পাচ্ছি। বাজারে প্রতিটি আনারস আকার ভেদে ২০ টাকা থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

আরেক কৃষক বিশু দাস বলেন, আনারস চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। খরচের তুলনায় লাভ বেশি পাওয়া যায়। প্রতি পিস আনারস ১৫ থেকে ২৫ টাকায় জমি থেকেই কিনে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমিরল ইসলাম বলেন, রাবানের মাটি তুলনামূলক উঁচু হওয়ায় সেখানে জন্মানো ফলমূল অন্যান্য এলাকা থেকে একটু বেশি সুস্বাদু হয়ে থাকে। উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা আনারস চাষিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আনারসের ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্য কৃষকদের সময়মত সুষম সার, খরায় পানির সেচ ও বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এজন্য মাটির পাশাপাশি বিশেষ যতেœর কারণেও এই গ্রামের আনারস বিশেষ খ্যাতি পেয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর নরসিংদীর উপ-পরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, আনারসের চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলার মনোহরদী, বেলাব ও পলাশ উপজেলায় আনারসের চাষ হয়। তবে রাবানের আনারস রসময় ও সুস্বাদু হওয়ায় সারাদেশে এর আলাদা খ্যাতি রয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মাধ্যমে আনারস সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কম খরচে চাষিরা পণ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে আনারস সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছি। যাতে কম খরচে চাষিরা পণ্য পরিবহন করতে পারে।