Home Second Lead ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

ঢাকায় জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস

বৃহস্পতিবার বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এসে পৌঁছলে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক

ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সরকারি সফরে আজ বিকেলে ঢাকায় পৌঁছেছেন।

গুতেরেসকে বহনকারী এমিরেটসের এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট (ইকে-৫৮৬) বিকেল ৪টা ২৬ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জাতিসংঘ মহাসচিবকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। দু’টি ছোট শিশু গুতেরেসকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানায়।

বিমানবন্দর থেকে জাতিসংঘ মহাসচিব হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে যান।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম আজ সকালে মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব তাঁর রমজান মাসের সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করছেন।’

তিনি বলেন, এই সফরকালে রোহিঙ্গা সংকট এবং এর সমাধানে বাংলাদেশের সাথে জাতিসংঘের সহযোগিতা, সেই সাথে অন্যান্য বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং রোহিঙ্গা ইস্যু ও অগ্রাধিকার বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান সকাল ৯ টায় হোটেলে গুতেরেসের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

পরে জাতিসংঘ প্রধান সকাল ১০টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে সাক্ষাৎ করবেন।

বৈঠকের পর গুতেরেস বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইটে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের জন্য কক্সবাজার যাবেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক কক্সবাজার বিমানবন্দরে গুতেরেসকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস দিনের শেষে গুতেরেসের সঙ্গে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সাথে ইফতারে যোগ দেবেন।

দুই নেতা অনুষ্ঠান চলাকালীন রোহিঙ্গা, ইমাম এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

ইফতারের আগে, মহাসচিব ক্যাম্পের বেশ কয়েকটি সুযোগ-সুবিধা পরিদর্শন করবেন, যার মধ্যে রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার, লার্নিং সেন্টার, মাল্টি-পারপাস সার্ভিস সেন্টার এবং একটি পাট উৎপাদন স্থাপনা।

তিনি রোহিঙ্গা যুবক ও শিশুদের সাথেও আলাপ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

গুতেরেস একই দিন সন্ধ্যায় ঢাকায় ফিরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অবস্থান করবেন।

শনিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় জাতিসংঘের কার্যালয় পরিদর্শন করবেন। সেখানে তিনি জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলন করবেন, বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী পর্যবেক্ষণ করবেন এবং জাতিসংঘের কর্মীদের সাথে একটি সভায় যোগ দেবেন।

বিকেলে তিনি ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ার ওপর একটি গোলটেবিল আলোচনায় যোগ দেবেন।

তিনি যুব সমাজের সাথে একটি সংলাপে অংশ নেবেন এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

পরে গুতেরেস হোটেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদের সাথে একটি যৌথ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ভাষণ দেবেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস একই দিনে জাতিসংঘ প্রধানের সম্মানে ইফতার এবং নৈশভোজের আয়োজন করবেন।

রোববার সকাল ৯ টা ৫৫ মিনিটে গুতেরেস এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করবেন। বিমানবন্দরে ড. খলিলুর রহমান তাকে বিদায় জানাবেন।

এই সফরকালে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান কূটনৈতিক মর্যাদা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গা সমস্যার মতো দেশটি যে সব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে তা তুলে ধরা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইউনূসকে লেখা সাম্প্রতিক এক চিঠিতে গুতেরেস আশা প্রকাশ করেছেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর আসন্ন উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন বৈশ্বিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং তাদের দুর্দশার জন্য সমাধান বের করতে সহায়তা করবে।

গুতেরেস বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সংগঠিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাবে।’

জাতিসংঘ প্রধান বলেন, তিনি তার ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপকদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে জাতিসংঘের স্থানীয় টিমগুলোকে রাখাইনে মানবিক সহায়তা ও জীবিকা নির্বাহের জন্য কীভাবে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছেন।

-বাসস