Home First Lead আবারও বিষাক্ত স্ক্র্যাপ জাহাজ গছানোর চেষ্টা

আবারও বিষাক্ত স্ক্র্যাপ জাহাজ গছানোর চেষ্টা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: আন্তর্জাতিক চক্র আবারও বিষভর্তি একটি জাহাজ বাংলাদেশে বিক্রির জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

সেই লক্ষ্যে ইন্দোনেশিয়ার বাটাম থেকে একটি টাগ জাহাজটিকে নিয়ে যাত্রাও শুরু করে চট্টগ্রামের পথে। কিন্তু চক্রটির আশা ভঙ্গ হয়েছে। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় কেউ রাজি হয়নি। তারপরও চক্রটি চেষ্টা চালাচ্ছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সাগরের মাঝে গ্যাসফিল্ডে জেসিলিন ন্যাটুনা।

সেই জাহাজটি জ্বালানি সংরক্ষণ ট্যাংকার, ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড অফলোডিং ( এফএসও ) ট্যাংকার। নাম জে. ন্যাট। আগে নাম ছিল জেসলিন ন্যাটুনা। সাগরের মাঝে ন্যাটুনা গ্যাসফিল্ডে নিয়োজিত ছিল। সেখানে ড্রিলিং করা গ্যাস ভরে রাখা হতো।

জে. ন্যাটকে যখন বাংলাদেশে রপ্তানির চেষ্টার খবর জানাজানি হয় তখন তা নিয়ে সক্রিয় হয় ইন্দোনেশিয়ার পরিবেশগত কেয়ার কমিটি। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়কে তারা সেটা নিয়ে অভিযোগ জানায় ১৫ এপ্রিল। এর পরপরই ১৭ এপ্রিল বাটাম-এর হারবার মাস্টারকে অনুরোধ জানায় যাত্রা বন্ধ রাখার। জে. ন্যাটে থাকা উচ্চ তেজষ্ক্রিয় পদার্থ এবং ট্যাংক ক্লিন না করার ব্যাপারে অবহিত করা হয়।

আইএমও কনভেনশন অনুসারে বিক্রির আগে নিজ দেশে প্রাথমিকভাবে জাহাজ ক্লিন করে দিতে হয়। ভারতের সুপ্রিম কোর্টে সেখানকার পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন পেশ করেছিল। এতে বলা হয়, শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভাঙার সময় প্রতিটি জাহাজ থেকে কমপক্ষে ৫ টন বিষাক্ত বর্জ্য বের হয়। এর সংস্পর্শে থাকা জাহাজভাঙা শ্রমিকদের প্রতি ৪ জনের একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ রয়েছে তাতে। ইয়ার্ড এলাকার বাতাসে বিপজ্জনক মাত্রায় এমোনিয়া ও ক্লোরোফ্লুরো কার্বন গ্যাস পাওয়ার বিষয়ও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

শিপব্রেকিং ইয়ার্ডে ভাঙার জন্য নানা বিষাক্ত পদার্থে ভর্তি জে ন্যাট ট্যাংকারটি আমদানির বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর অবহিত নয় বলে জানিয়েছে গণমাধ্যমকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন যে এ রকম কোন ট্যাংকার আমদানির বিষয়ে অবগত নন।

এনজিও শিপব্রেকিং প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে জে. ন্যাট ট্যাংকারটির ব্যাপারে অবহিত করেছে। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে  এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, ১৫০০ মেট্রিক টনের অধিক বিষাক্ত নানা বর্জে্য ভর্তি ট্যাংকারটি। রয়েছে এক হাজার টন স্লোপ অয়েল, ৫০০ টন তৈলাক্ত পানি, মার্কারি মিশ্রিত ৬০ জন স্লাজ অয়েল। অবকাঠামোতেও রয়েছে প্রচুর মার্কারি। এসব পদার্থের সব ক’টাই মারাত্মক ক্ষতিকর জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য। জানানো হয়, আন্তর্জাতিক বর্জ্য আইনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এ ধরনের বর্জ্য থাকা জাহাজ আমদানিতে।

বাংলাদেশের ইয়ার্ডগুলোতে এ জাতীয় জাহাজ ভাঙার মত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেই।  বিধি বিধানের তোয়াক্কা না করে এক বড় কোম্পানি বিষাক্ত জাহাজ এনে ক্ষতির মুখে পড়েছে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে।

ইন্দোনেশিয়ার গ্লোবাল নায়াগা বার্সামা পিটি ছিল ১৯৮২ সালে জাপানে নির্মিত জেসলিন ন্যাটুনার স্বত্ত্বাধিকারি। গত আগস্ট পর্যন্ত ছিল তাদের মালিকানায়। এরপর বিক্রি করে দেয়া হয়েছে হংকং-এর কোম্পানি সোম্যাপের কাছে। সোম্যাপ এর নগদ কারবার স্ক্র্যাপ  জাহাজ বেচার। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, চিন এবং তুরস্কের শিপ ব্রেকার ও ব্রোকারদের কাছে বিক্রি করে। ট্যাংকারটি বিক্রির সুবিধার জন্য নাম এবং ফ্ল্যাগ পরিবর্তন করে সোম্যাপ। নতুন নাম জে. ন্যাট। ফ্ল্যাগও পাল্টানো হয়। পালাও ফ্ল্যাগ বর্তমানে।