ঢাকা: সাবেক অর্থমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত ইন্তেকাল করেছেন। শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিনগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ( ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।) বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।মুহিতের দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, স্যার আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্বাসকষ্ট ও সুগার ফল্ট করে তার। সকাল ৭টায় নিজের হাতে আমি স্যারকে খাইয়েছি। সারাদিন অসুস্থ ছিলেন। স্যার রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে মারা গেছেন। তার মরদেহ এখন ইউনাইটেড হাসপাতালে আছে।
শুক্রবার মধ্যরাতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযেগ বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসিন রেজা। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শুক্রবার রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
বিবৃতিতে জানানো হয়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রথম জানাজা হবে গুলশান আজাদ মসজিদে, সকাল সাড়ে ১১টায় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে নেয়া হবে এবং এরপর দাফনের জন্য মরদেহ সিলেটে নেয়া হবে।
গত বছর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বর্ষীয়ান সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন তিনি।
পারিবারিক সূত্র জানা গেছে, শনিবার (৩০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টায় গুলশান আজাদ মসজিদে মুহিতের প্রথম নামাজে জানাজা হবে। এরপর সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় সংসদ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
দুপুর ১২টায় তার মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য শহীদ মিনারে নেওয়া হবে। এরপর দাফনের জন্য তার মরদেহ জন্মস্থান সিলেটে নেওয়া হবে।
মুহিত আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর বাজেট উপস্থাপন করেছেন জাতীয় সংসদে। এ সময়ে বড় হয়েছে বাজেটের আকার। ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম আবুল মাল আবদুল মুহিতের। পরিবারের তৃতীয় সন্তান তিনি। আবুল মাল আবদুল মুহিতের দাদা খান বাহাদুর আবদুর রহিম ব্রিটিশ ভারতে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। বাবা আবু আহমদ আবদুল হাফিজ ছিলেন আইনজীবী। মা সৈয়দা শাহার বানু চৌধুরী প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা না করলেও সমাজ ও রাজনীতিসচেতন ছিলেন
আবদুল মুহিত ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন। পরের বছর একই বিষয়ে অর্জন করেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। ছাত্রজীবনে সলিমুল্লাহ হল ছাত্র সংসদে ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি যোগ দেন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে (সিএসপি)। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন মুহিত। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে ষাটের দশকের শুরুর দিকে ২৫ পৃষ্ঠার একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন তিনি।
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত থাকার সময় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন মুহিত। এরপর প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন করেন। এ কারণে তাঁকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসামরিক সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দেওয়া হয়।
একজন লেখক হিসেবেও জনাব মুহিত খ্যাতিমান। প্রশাসনিক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে তার ৩০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিষয়ে তাঁর ‘জেলায় জেলায় সরকার’ একটি আকর গ্রন্থ। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের মহকুমা গুলোকে জেলায় রূপান্তর এবং গণতান্ত্রিক জেলা পরিষদ প্রতিষ্ঠার প্রথম প্রশাসনিক প্রতিবেদন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালে তিনি প্রণয়ন করেছিলেন। আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্ত্রী সাবিয়া মুহিত একজন ডিজাইনার। তাদের তিন সন্তানের মধ্যে প্রথম কন্যা সামিনা মুহিত ব্যাংকার ও আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞ, বড় ছেলে সাহেদ মুহিত বাস্তুকলাবিদ এবং কনিষ্ঠ পুত্র সামির মুহিত শিক্ষকতা করেন।
বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব আবুল মাল আবদুল মুহিত শেষ জীবনে বার্ধক্যজনিত কারণে ছিলেন অনেকটা ঘরবন্দি। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হতেন না। কিন্তু প্রতিটি সময়কে তিনি ব্যবহার করেন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে। বেশিরভাগ সময় বই পড়েন। নিয়মিত লেখালেখি করছেন। আত্মজীবনী লেখার অসমাপ্ত কাজও প্রায় শেষ করে এনেছিলেন।