জরুরি প্রয়োজন হলেও সঠিক সময়ে আমরা যেতে পারি না । মুমূর্ষু রোগী বা গর্ভবতীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমাদের সন্তানেরা সঠিক সময়ে স্কুল কলেজে যেতে পারে না। এছাড়াও সঠিক সময়ে উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে না পারার কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।
এমরান হোসেন, জামালপুর থেকে: সরিষাবাড়ী উপজেলার ঝিনাই ব্রিজের দুই প্রান্ত থাকলেও মাঝের অংশ নেই দেড় বছর যাবত। ২০২০ সালের বন্যায় পানির স্রোতে মাঝখান থেকে ভেঙে যায় উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের ঝিনাই নদীর ওপর নির্মিত এ ব্রিজটি। তারপর থেকে চরম দুর্ভোগ নিয়েই যাতায়াত করছে ২০টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
শুকনো মৌসুমে স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি কাঠের ব্রিজ আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাই এখন যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। বর্ষা মৌসুমে নৌকায় চলাচল করতে গিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনাও ঘটেছে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩-২০০৪ অর্থবছরে শুয়াকৈর-হুদুর মোড় শাহাজাদাহাট এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের ঝারকাটা ব্রিজটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০০৬ সালে শেষ হয়।
২০২০ সালের ২১ জুলাই দুপুরে ব্রিজটির দুটি পিলারসহ ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের দুটি গার্ডার প্রায় এক ফুট দেবে যায়। ওইদিন রাতেই ব্রিজের মাঝের অংশের ৭ নম্বর পিলার এবং ৬ ও ৭ নম্বর স্প্যানের ৪০ মিটার পানির তোড়ে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
এতে চরাঞ্চলের চররৌহা, চর নান্দিনা, বড়বাড়ীয়া, বীর বড়বাড়ীয়া, হেলেঞ্চাবাড়ী, মাদারগঞ্জের চর লোটাবর, শ্যামগঞ্জ কালিবাড়ী, সরদারবাড়ী রায়েরছড়া সহ ২০ টি গ্রামের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন।
লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের দুর্ভোগ লাঘবে জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই ব্রিজটি মেরামতের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন দেখতে না পেয়ে ভুক্তভোগীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় এলাকাবাসী রহিম মিয়া, কুদ্দুস আলী, জহুরা বেগম, রবিউল, বারেক হোসেনসহ আরও অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের রাস্তা নেই, যাতায়াত করতে পারছি না। শুধু আশা দিয়েই যাচ্ছে। কেউ দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছে না।
তারা আরও বলেন, ব্রিজটি ভাঙার পর থেকে আমাদের আর দুঃখের শেষ নেই। আমাদের যেকোন প্রয়োজনে সরিষাবাড়ী পৌর শহরে যেতে হয়। জরুরি প্রয়োজন হলেও সঠিক সময়ে আমরা যেতে পারি না । মুমূর্ষু রোগী বা গর্ভবতীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। আমাদের সন্তানেরা সঠিক সময়ে স্কুল কলেজে যেতে পারে না। এছাড়াও সঠিক সময়ে উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে না পারার কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না।
সরিষাবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি একেএম আশরাফুল ইসলাম জানান, ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে নিম্নমানের নির্মাণ কাজ এবং ব্রিজের পাশ থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলন। এতে সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ও সাতপোয়া ইউনিয়নের একাংশ এবং পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ও আদারভিটা ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ নিয়েই চলাচল করছে এ রাস্তায়।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ব্রীজটি মাঝখানে ভেঙে যাওয়ায় এ রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচল করে না। তাই আমাদের স্কুল কলেজে যেতে হয় পায়ে হেঁটে। আমরা সঠিক সময়ে স্কুল কলেজে যেতে পারি না। আমাদের পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, ব্রীজটি ইতোমধ্যে একটি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।