বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
রবিবার রাতে কাতার-ইকুয়েডর ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ। তবে উপদ্বীপের উন্মাদনাটা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাকে ঘিরেই, যা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। এই উপত্যকার সমর্থকদের চোখ থাকবে কাতারের লুসাইল স্টেডিয়ামে। যেখানে আজ মাঠে নামছে বিশ্বকাপের অভিষেক আসরের রানার্সআপ আর্জেন্টাইনরা। ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসিরা মুখোমুখি হবেন এশিয়ার আরেক দল সৌদি আরবের
যেকোনো প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক দলের কাছে প্রথম ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সবারই লক্ষ্য থাকে এই ম্যাচ জিতে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা, বাকি পথটা সহজ করা। আজ আর্জেন্টিনারও সেই লক্ষ্য থাকবে। সৌদি আরবকে হারিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
চলতি শতাব্দীর পাঁচ বিশ্বকাপের প্রতিটি আসরের প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। ২০০২ সাল ছাড়া প্রতিটিতেই তারা নকআউট পর্ব খেলেছে। সেবার বাতিস্তা-সেমিওয়ালাসহ তারকা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলটি গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। তবে বাকি আসরগুলোর একটিতে সেকেন্ড রাউন্ড, দুটিতে কোয়ার্টার ফাইনাল ও একটিতে ফাইনাল খেলেছে তারা।
ফুটবল বিশ্বকাপের অভিষেক আসর হয়েছিল ১৯৩০ সালে। উরুগুয়ের রাজধানী মোন্তেভিদেওতে এস্তাদিও পসিটস মাঠে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচে ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে তারা শুভ সূচনা করেছিল। সে আসরে তারা উঠেছিল ফাইনালে। যদিও উরুগুয়ের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পরের আসর ১৯৩৪ সালে ইতালির বোলোনিয়ায় সুইডেনের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে তারা। সে ম্যাচে তারা ৩-২ গোলে হেরে যায়।
আর্থিক বনিবনা না হওয়াতে আর্জেন্টিনার অনেক খেলোয়াড় দেশ ছেড়েছিলেন। ফলে তাদের জাতীয় দলটি হয়ে পড়ে দুর্বল। কিন্তু খর্বশক্তির দল নিয়ে খেলে লজ্জায় পড়তে চায়নি দেশটির ফেডারেশন। এছাড়া ব্রাজিলের সঙ্গে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশনের সম্পর্কেরও অবনতি হতে থাকে। তাই ১৯৫০ বিশ্বকাপ থেকেও নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
বিশ্বকাপ হচ্ছে অথচ আর্জেন্টিনা নেই! আকাশি-নীল দলটি ছাড়া বিশ্বকাপ কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। একটু অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে, প্রথম বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা ত্রিশ থেকে পঞ্চাশের দশক পর্যন্ত টানা তিনটি আসরে অংশই নেয়নি! ১৯৫০ তো বটেই, ১৯৫৪ সালের সুইজারল্যান্ড বিশ্বকাপও বর্জন করেছিল আর্জেন্টাইন। তবে ১৯৫৮ সালে সুইডেনে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ দিয়ে ৩৪ বছর পর ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে ফিরে আসে তারা।
তবে ১৯৫৮ সালের প্রত্যাবর্তনটা তারা রাঙাতে পারেনি। ৮ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে যায়। শুধু তাই নয়! সেবার তারা গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। পরের আসরে চিলিতে ১৯৬২ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচ তারা খেলে বুলগেরিয়ার বিপক্ষে। সেদিন তারা ১-০ গোলে জিতে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু এ বছরও তারা গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয়।
তবে ইংল্যান্ডে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে। সে আসরে তারা নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলেন স্পেনের বিপক্ষে ১৩ জুলাইয়ের সেই ম্যাচে ২-১ গোলে জিতে তারা শুভ সূচনা করেছিল। যদিও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে আবার তারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
১৯৭৪ বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল। শুরুটাও খুব ভালো বলা যায় না। ইতালির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল। নিজেদের সোনালি সময়টা যারা হেলা আর অহমের কারণে বিশ্বকাপ নামক লক্ষ্মীকে পায়ে ঠেলে বিদায় করেছে, সেই আকাশি-নীল জার্সিধারী আর্জেন্টাইনরা ১৯৭৮ সালে এসে শিরোপার স্বাদ পায়। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরিকে ২-১ গোলে হারিয়ে শুভ সূচনা করেছিল।
শিরোপা জয়ের পরের আসরে ১৯৮২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে আবার দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। সেবার বেলজিয়ামের কাছে ১-০ গোলে হেরে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু হয়েছিল তাদের। তবে ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার হাত ধরে ফের শিরোপা যায় আর্জেন্টিনাতে। মেক্সিকোতে সেবার দক্ষিণ কোরিয়াকে ৩-১ গোলে গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছিল, যা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখে তারা। সেবার একই ম্যাচে ‘হ্যান্ড অব গড’ ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ দেখেছিল ফুটবলবিশ্ব। যার মাধ্যমে ম্যারাডোনা হয়ে ওঠেন ফুটবল ঈশ্বর।
১৯৯০ সালে ফের বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। সেবার নিজেদের প্রথম ম্যাচটাও অবশ্য ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলের হার দিয়ে শুরু করেছিল।
পরের আসর ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপে গ্রিসকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছিল। কিন্তু রাউন্ড ১৬ থেকেই তাদের বিদায় নিতে হয়েছিল।
ফ্রান্সে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল আর্জেন্টিনার। তবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিতে হয়। পরের আসরে জাপান-কোরিয়ার যৌথ উদ্যোগে ২০০২ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নাইজেরিয়াকে ১-০ গোলে হারায় সেমিওয়ালার দল। কিন্তু গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
জার্মানিতে ২০০৬ সালে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইভেরি কোস্টের বিরুদ্ধে ১-০ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করে। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে স্বাগতিকদের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার ২০১০ বিশ্বকাপেও এই জার্মানির কাছেই হেরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। তবে নাইজেরিয়াকে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারায় তারা।
ব্রাজিলে ২০১৪ বিশ্বকাপে ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় আর্জেন্টিনা। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানের জয় দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশ্বকাপ মিশন। তবে যাচ্ছেতাই পারফরম্যান্স নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছিল তারা রাশিয়াতে। যার প্রমাণ তাদের ফলাফলে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করে তারা। ফ্রান্সের কাছে হেরে রাউন্ড ১৬ থেকে বিদায় নেয়।
তবে কোপা আমেরিকা আর ফিনালিসসিমা জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে আর্জেন্টিনা। ঘুচিয়েছে তাদের ২৮ বছরের শিরোপা-খরা। এবার সুযোগ বিশ্বজয়ের। অঘটন না হলে যার শুরুটা হতে পারে লুসাইলে সৌদি আরবের বিপক্ষে জয় দিয়ে।