Home First Lead উত্তরাঞ্চলে আলুর দরপতনে বিশাল ক্ষতির মুখে চাষিরা

উত্তরাঞ্চলে আলুর দরপতনে বিশাল ক্ষতির মুখে চাষিরা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, রাজশাহী : উত্তরাঞ্চলের হাজারো আলুচাষি বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। আলু বিক্রি করে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও না ওঠায় ব্যাংক ও মহাজনি ঋণ পরিশোধ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় তারা।

চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছর আলুর দাম বেশি থাকায় বীজ আলুর দামও ছিল বেশি। অন্যান্য কৃষি উপকরণের দামও ছিল অধিক। তাই এবারে আলু আবাদে প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ৬০ হাজার টাকা থেকে ৭০ হাজার টাকা। আর এক বিঘায় উৎপাদিত হয়েছে ৪ হাজার ৪৫০ কেজি। এই আলু বেচে পাওয়া গেছে সর্বোচ্চ ৪৪,৫০০ টাকা। অর্থাৎ বিঘাপ্রতি লোকসান ২৫,৫০০ টাকা।

বর্তমানে কেজি ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা ক্ষেতে। গত এক দশকের মধ্যে তা সর্বনিম্ন। গত বছর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া ছিল চার টাকা। এবার এক লাফে সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়। হিমাগার মালিক ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশল করে হিমাগারের অগ্রিম বুকিং সম্পন্ন করে রেখেছে। এ বছর আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে আন্দোলনের কারণে অধিকাংশ সাধারণ কৃষক  হিমাগারে কোনো বুকিং দিতে পারেনি। তাই কৃষকরা  হিমাগারে রাখতে পারছেন না। বাড়িতেও সংরক্ষণের সুযোগ নেই। চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। কম দামে তারা আলু কিনে নিচ্ছেন।

চাষিরা জানান, ‘হিমাগার মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আলু মজুতদার চক্র হিমাগারে অগ্রিম বুকিং করে রেখেছে।  সাধারণ আলুচাষিরা এবার হিমাগারে কোনো বুকিং পায়নি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে প্রতি হেক্টরে ২৭ টন হিসাবে উক্ত জমিতে এবার প্রায় ৯৮ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু ফলনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের সর্বাধিক আলু উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে রয়েছে রাজশাহী, বগুড়া ও রংপুর।

উত্তরাঞ্চলে আলু সংরক্ষণের ২২১টি হিমাগার রয়েছে। ধারণক্ষমতা ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টন। যা উত্তরাঞ্চলে উৎপাদিত মোট আলুর মাত্র ২৩ ভাগ। বাকি ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ২৮৮ টন আলু সাময়িকভাবে গৃহস্থ পর্যায়ে সংরক্ষণ এবং চলতি বাজারে বিক্রি করা হয়।

রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান বলেন, হিমাগারের 
ভাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে বাড়ানো হয়েছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, হিমাগারে বুকিং শুরু হয় আবাদ শুরুর অনেক আগেই। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর আগেই বুকিং হয়ে যায়। ফলে এখানে কথিত সিন্ডিকেটের কিছু নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোতালেব হোসেন জানান, আবহাওয়া ভালো থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু বিপুল পরিমাণ আলু সংরক্ষণের সুবিধা না থাকায়  দাম কমে গেছে।