Home Third Lead আলুর দরপতন, মণে কমে গেছে ২০০ টাকা

আলুর দরপতন, মণে কমে গেছে ২০০ টাকা

মতলুব হোসেন, জয়পুরহাট থেকে: জয়পুরহাটে আগাম জাতের আলু তোলা শুরু হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ার আশায় আলু চাষিরা এ মৌসুমে আগাম জাতের আলু রোপণ করেছিলেন কিন্তু এবার আলুর ফলন গত মৌসুমের চেয়ে ভালো হলেও দাম নিয়ে হতাশায় পড়েছে চাষিরা। আলু চাষে খরচ বৃদ্ধি পেলেও কাঙ্খিত মূল্য পাচ্ছে না বলে জানান কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এখন যারা আলু তুলছেন, তাদের সব খরচ বাদ দিয়ে কিছুটা লাভ থাকছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর বাজার প্রতি মণে একশ’ থেকে দেড়শ থেকে দুইশো’ টাকা কমে গেছে। এভাবে কমতে থাকলে আগামী সপ্তাহে যারা আলু তুলবেন তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হবে জানান তারা। আলু উৎপাদনে দেশের তৃতীয় বৃহৎ জেলার ক্ষেতলাল, কালাই সদর উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষাণ—কৃষাণীরা আগাম জাতের আলু তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মৌসুমের শুরুতে মূলত ক্যারেজ, রোমানা, স্টি্রক, গেলোনা নামিউজিকা, ফ্রেশ, ফাটা পাকরি এবং বট পারকরি আলু তোলা হচ্ছে।

সদরের নতুন হাটে সকালে আলু বিক্রি করতে আসা চাষিরা জানান, বাজারে এখন প্রতি মণ ক্যারেজ আলু ৪৪০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আর গ্রানোলা আলু ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা মণ। যত দিন যাচ্ছে আলুর দামও নেমেই যাচ্ছে। আলুর বাজার দর এভাবে চলতে থাকলে চাষিদের লোকসান গুনতে হবে।

মৌসুমের শুরুতে এবার দেড় বিঘা জমিতে আগাম জাতের বট পাকরি ও রেমিউজিকা জাতের আলু চাষ করেছেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার জামালপুর গ্রামের আলু চাষি মোকারম হোসেন জানান রোপণের ২ মাস ৬ দিন বয়সে আলু তুলেছি। জমিতে বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ৬০—৬৫ মণ। বিক্রির সময় পাইকারী ক্রেতাকে প্রতি বস্তায় ৩ কেজি হারে বিঘাপ্রতি কয়েক মণ আলু বেশি দিতে হয়। ফলে বিঘাপ্রতি ৬৫ মণ ফলন হলেও সব বাদে ৬০ মণের দাম পাওয়া যায়। বর্তমানে আলুর বাজার অত্যন্ত কম। মৌসুমের শুরুতে ১০০০থেকে১২০০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করেছি, অনেকেই ১৪০০ টাকা দরে আলু বিক্রি করেছে। খরচ বাদে ভালই লাভ হয়েছে। এখন বাজার দিন দিন যে ভাবে আলুর দাম নেমে যাচ্ছে তাতে লোকসান গুনতে হবে কৃষককে। আলুর পাইকারি ক্রেতা ফরিদ হোসেন, কাজল ও সাহেব আলী বলেন, বাজারে এখন আগাম জাতের আলু উঠতে শুরু করেছে। এসব আলু ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মোকামে সরবরাহ করা হচ্ছে। কাঁচা বাজারের মূল্য সঠিক ভাবে বলা যায় না। এক সপ্তাহ পরে আলুর দাম বাড়তেও পারে। আবার কমতেও পারে।

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ—পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল করিম জানান, জেলায় এবার ৪০ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাষ হয়েছে প্রায় ৩৮ হাজার ১০০হেক্টর জমিতে,এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১০০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৭ হাজার, কালাইয়ে ১১ হাজার ১০০, ক্ষেতলালে ৯ হাজার এবং আক্কেলপুরে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হয়েছে এবং লক্ষ্য মাত্রার অধিক জমিতে আলু চাষ হয়েছে। বর্তমানে আলুর বাজার কিছুটা নিম্নমুখী। এতে চাষিদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। জেলার হিমাগার গুলোতে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত আলু সংরক্ষিত রয়েছে ফলে আগাম জাতের আলুর দাম কিছুটা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে আগামী দু’এক সপ্তাহের মধ্যেই হিমাগারে সংরক্ষিত অতিরিক্ত আলু শেষ হলে নতুন আলুর দামও বৃদ্ধি পাবে।