Home আন্তর্জাতিক মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে আল্লামা সুদাইসের ৪২ বছর

মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে আল্লামা সুদাইসের ৪২ বছর

আল্লামা শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস। ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: সৌদি আরবের পবিত্র মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ৪২ বছর পূর্ণ করতে চলেছেন আল্লামা শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস।

শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস ১৯৮৪ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে মক্কার পবিত্র মসজিদ আল-হরামের ইমাম হিসেবে নিযুক্ত হন। এটি ছিল তাঁর জন্য এক বিরল সুযোগ এবং তা তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

সুললিত তেলাওয়াতের জন্য গোটা দুনিয়ায় তিনি খ্যাত। শেখ আবদুর রহমান আল-সুদাইস একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার এবং মক্কার পবিত্র মসজিদ আল-হরামের বর্তমান ইমাম। তিনি ১৯৬০ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামিক জ্ঞানের পাশাপাশি কোরআন তেলাওয়াত এবং তার সুরেলা কণ্ঠস্বরে বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

সৌদি আরবের আল-ক্বাসীম এলাকার বুকাইরিয়া শহরে তার জন্ম হয় ১৩৮২ হিজরীতে।  তিনি ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন। প্রায় ১২ বছর বয়েসে তিনি পবিত্র কোরআনের হাফিজ হন। লেখাপড়া করেছেন রিয়াদে। ১৯৯৫ সালে মক্কার উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়-এর শরিয়া ফ্যাকাল্টি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

তিনি ছোট বেলার একটা ঘটনা বলতে গিয়ে খুব আবেগী হয়ে যান। ছোট বেলায় কি একটা দুষ্টুমি করেছিলেন ফলে তার মা তার ওপর রেগে যান। রেগে গিয়ে বলেনঃ তুই বের হয়ে যা, গিয়ে হারামাইনের ‘ইমাম’ হও।

আল্লাহ সুবহানাহু ও তায়ালা তার আম্মার এই দোয়া কবুল করেছেন। তিনি কা’বা শরীফের ইমাম হওয়ার আগে অনেক ছোট বড় মসজিদের ইমামতিও করেছেন।

তিনি উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর। তিনি শরীয়া কোর্টের বিচারপতিও ছিলেন। তাঁর এই গুরু দায়িত্বের পাশাপাশি তিনি সব সময় শিক্ষকতার পেশাকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে কাছে টেনে নিয়েছেন।

সৌদি সরকারের অনুমোদিত জামেয়াতুল মা’রেফা আল-আলামিয়্যাহ (নলেজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর) যার শিক্ষকতায় আছেন সৌদি গ্রান্ড মুফতি, ধর্মমন্ত্রী সহ অনেক উচ্চ পদস্থ উলামায়ে কেরাম।

তিনি খুবই বিনয়ী। সব সময় সাধারণ মানুষদের কাছে থাকতে ও সাথে থাকতে ভালোবাসেন। তিনি এখন কা’বা শরীফ ও মসজিদে নববীর প্রধান ইমাম। কিন্তু এখনও তিনি ক্লিনারদের সাথে বসে ইফতার করতে ও খাবার খেতে পছন্দ করেন। তিনি সব সময় হাস্যোজ্জ্বল থাকেন। সবার সাথে হাসি মুখে মন খুলে কথা বলেন। খুব বিনয়ের সাথে নরম ও মিষ্টিস্বরে কথা বলেন। তিনি হাল্কা কৌতুক করতে ও চুটকি বলতে পছন্দ করেন। তবে, নামাযে দাড়ালেই কেঁদে ফেলেন।

শেখ সুদাইস একবার এক টিভি অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর দিচ্ছিলেন। এমন সময় এক মহিলা ফোন করে বলেনঃ

– “আমি স্বপ্নে দেখেছি যে এক বড় বিখ্যাত শায়খ কা’বা শরীফে উলংগ হয়ে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছেন। তিনি আমার কোন আত্মীয় নন, বা কাছের কেউ নন। কিন্তু আমি তাকে খুব ভালো করেই চিনি। এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা কি?”

– তখন শেখ সুদাইস বললেনঃ “সেই লোকের জন্যে সুসংবাদ, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট আছেন এবং তিনি গুনাহ থেকে মুক্ত হয়েছেন।”

– তখন প্রশ্নকারী মহিলা বললেনঃ “আমি যে শায়খকে স্বপ্ন দেখেছি তিনি হলেন ‘আপনি’ (শায়খ সুদাইস)।”

এ কথা শুনার সাথে সাথেই শায়খ সুদাইস অঝোর ধারায় কেঁদে দিলেন।

শেখ আল-সুদাইসের কুরআন তেলাওয়াত এবং তাঁর ইসলামিক বাচনভঙ্গি মুসলিম বিশ্বের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত। তার তেলাওয়াতের ভিডিও এবং অডিও রেকর্ডিং পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। তাঁর মধুর কণ্ঠস্বরে কুরআন তেলাওয়াত শুনে অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং ভক্তিতে দ্রবীভূত হয়েছেন।