Home Second Lead ইউএনও হত্যাচেষ্টার হোতা বরখাস্ত মালি!

ইউএনও হত্যাচেষ্টার হোতা বরখাস্ত মালি!

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর তারই অফিসের বরখাস্ত হওয়া চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারী (মালি) হামলা চালিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

আলোচিত ওই হামলার ঘটনার দশম দিনে শনিবার দিনাজপুরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানান পুলিশের রংপুর রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) দেবদাস ভট্টাচার্য। যদিও এর আগে র‌্যাব ঘোড়াঘাট যুবলীগের নেতা আসাদুল হকসহ তিনজনকে আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে বলেছিল, ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা হয় চুরি করতে গিয়ে। এখন সেই আসাদুল হক হামলার ঘটনায় জড়িত নয় বলে দাবি করছে পুলিশ।

তবে এর আগে চুরির উদ্দেশ্যে হামলা হয় বলে র‌্যাবের দেওয়া ভাষ্যের সত্যতা নিয়ে দিনাজপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে সংশয় তৈরি হয়েছিল। একইভাবে এবার পুলিশের দেওয়া নতুন বক্তব্য নিয়েও সন্দিহান তারা। অবশ্য পুলিশের উদঘাটনকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছে ওয়াহিদার পরিবার।

গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে বাসভবনের ভেন্টিলেটর দিয়ে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালানো হয়। মাথায় হাতুড়ির আঘাতে গুরুতর আহত ওয়াহিদা এখন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়নের মধ্যে দুদিন পর তিনজনকে গ্রেপ্তার করে তাদের ‘স্বীকারোক্তির’ বরাত দিয়ে র‌্যাব-১৩ অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চুরি করতে ওই বাড়িতে ঢুকেছিল আসাদুল (৩৫)। তার সহযোগী ছিল নবীরুল ইসলাম (৩৪) ও সান্টু কুমার বিশ্বাস (২৮)।  এই আসাদুল হক চুরি করতে গিয়ে ইউএনওর ওপর হামলা চালিয়েছিল। তবে এখন পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা।  তবে ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনাকে নিছক চুরির ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ সরকারি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সমিতির নেতারা দাবি করেন, ওয়াহিদার ওপর হামলা পরিকল্পিত।

এরই মধ্যে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদের বরখাস্ত হওয়া মালি রবিউল ইসলামকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়ে ডিআইজি দেবদাস  সংবাদ ব্রিফিয়ে বলেন, এই ব্যক্তিই ওয়াহিদার ওপর হামলায় জড়িত।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, রবিউল ইসলাম বিরল উপজেলার ধামাহার গ্রামের বাসিন্দা। গত শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হামলার দায়ও স্বীকার করেছেন তিনি।

ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ ও হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত জিনিসপত্রের আলোকে আমরা বেশ কয়েকজনকে ঘটনা সংক্রান্তে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। আমরা একজন ব্যক্তিকে (রবিউল) আটক করেছি। সে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে বক্তব্য প্রদান করেছে। তার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমরা বেশ কিছু আলামতও উদ্ধার করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে সেটির সঙ্গে আমরা মিলিয়ে দেখছি।

কে এই রবিউল : অনুসন্ধানে জানা যায় রবিউল ইসলাম দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের ডাকবাংলোতে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে বছরখানেক আগে তাকে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বদলি করা হয়। সেখানে গিয়ে রবিউল ইসলাম ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ৫০ হাজার টাকা চুরি করে। সেই টাকা চুরির অপরাধে রবিউল ইসলামকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে বিভাগীয় মামলা দায়ের হলে মামলার তদন্তে টাকা চুরির সত্যতা পাওয়া গেলে রবিউল ইসলামকে চাকরিচুত্য করা হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই ইউএনওকে হত্যাচেষ্টা চালায় বলেও ধারণা করছেন প্রশাসনের অনেকেই।

রবিউল ইসলামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলায় হলেও ঘটনার দিন রবিউল ইসলাম সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ঘোড়াঘাটে অবস্থান করছিলেন বলেও জানা গেছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে এই তথ্য পাওয়া যায়। যদিও দিনাজপুর শহর থেকে ঘোড়াঘাট উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, রবিউল ইসলাম ঘটনার দিন বিকেল বেলা দিনাজপুর শহরের ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি বাসে উঠে ঘোড়াঘাট পৌঁছায়।

রবিউল ইসলাম জুয়ায় আসক্ত ছিলেন বলেও জানা যায়। জুয়া খেলতে গিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছে ধারদেনা করেন। এতে অনেক মানুষ রবিউল ইসলামের কাছে টাকা পায় বলেও জানান অনেকেই। ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় ইউএনও অফিসের নৈশপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশেরও জড়িত থাকার কথা জানা গেছে। রবিউলকে সহযোগিতা করেছেন পলাশ। এছাড়া রবিউল ইসলাম দীর্ঘদিন ইউএনওর কার্যালয়ে চাকরি করার সুবাধে কোথায় কী আছে সেগুলোও জানা ছিল তার।