আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া থেকে: হাই কোর্টের আদেশ অমান্য করে কুষ্টিয়া জেলাজুরে চলছে অবৈধ ভাবে ইট ভাটার ব্যবসা। হুমকিতে লোকালয় ও কৃষিজমি। ঝুঁকিপূর্ণ ও বেপরোয়া ইট ভাটার ব্যবসা প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন, দৌলতপুরে সেখানে ২৯টি ইট ভাটার মাত্র ১টি বৈধ, ২৮ টি অবৈধ। এখানে ২৮ টি ইট ভাটায় নষ্ট করেছে অন্তত ২০ টি বিস্তীর্ন ফসলের মাঠ। নামমাত্র দু—একটি কয়লার ভাটা থাকলেও বাকিসব চলে গাছ পুড়িয়ে, কাটা হয় ফসলী মাটি।
কোন কোনো উদ্যোক্তা কয়লার ভাটা বন্ধ রেখে লাগামহীন চালাচ্ছেন গাছ পোড়ানো ভাটা। ইটের ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ কাটা কল। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক বলেন, কুষ্টিয়া জেলাজুরে প্রায় ২’শ ইট ভাটার সব কয়টি অবৈধ। কোন ভাটার ইট পুড়ানো লাইসেন্স নেই। ভাটা মালিক সমিতি হাই কোর্টে একটা রীট ফাইল করেই তারা ইট পুড়াচ্ছে। তবে চলতি মৌসুমে ৭ হাজার টাকা টন কয়লা ৩০ হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে বলে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী করছে।
তারা বলেন স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই ইট পুড়াচ্ছি। প্রশাসনের সাথে একটু ঝামেলা হলেই তারা মাঝে মধ্যে ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করছে। তবে সব ভাটায় অভিযান চলেনা। যে কারনেই প্রকাশ্যে ইটভাটা গুলোতে অবাধে কাঠ পুড়াচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য মোতাবেক, কুষ্টিয়া জেলার ৬টি উপজেলার দৌলতপুর বৈধ ভাটা রয়েছে—১টি, ভেড়ামারায় ৫টি, মিরপুরে শূন্য কুষ্টিয়া সদরে ১টি, কুমারখালীতে ১১টি ও খোকসায় ৪টি। অবৈধ ভাটা তৈরী হয়েছে প্রায় ১৫০টি। মিরপুর ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় প্রায় শতাধিক অবৈধ ইট ভাটা থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। সব কয়টি উপজেলায় সামষ্টিক অর্থনীতি ও পরিবেশ ভারসাম্যে বিরূপ প্রভাব এনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দেদারসে চালানো হচ্ছে ইটের ভাটা, যেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। দৌলতপুর উপজেলার স্বরূপপুর—বাজুডাঙ্গা এলাকা, মিরপুর উপজেলার মশান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটায় সরেজমিনে কাঠ পুড়তে দেখা গেছে। মজুদ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ কাটা গাছ। এসব ইট ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের ক্ষেতেই।
শাদীপুর ফসলের মাঠ এখন ইট ভাটার দখলে। এই এলাকায় ইটের ভাটা পাঁচটি। যার মধ্যে একটিতে কয়লার জ্বালানী আয়োজন থাকলেও তা অব্যবহৃত। ওই ভাটাতেই বসানো হয়েছে কাঠ ফাঁড়ার মেশিন। এখানে কমবেশি সব ভাটাতেই স’ মিল বসিয়ে গাছ কেটে জ্বালানী তৈরি করা হয়। আল সালেহ লাইফ লাইন ব্রিক্সের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, আমার দু’টি ভাটা একটি কয়লায় চলে আরেকটি খড়িতে। তবে, তার ভাটায় কয়লার মজুদ না থাকলেও আছে কাটা গাছের বিশাল মজুদ।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার এই দৌলতপুর উপজেলায় ইট পোড়ানোর একেক মৌসুমেই কাটা গাছের প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ১ লাখ টন, যার চলতি বাজারমূল্য অন্তত ৪০ কোটি টাকা। এখানে বছরে অন্তত ২৫ কোটি ইট উৎপাদন হয়। দৌলতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলমা বলেন, এসব ইট ভাটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে, আমি দায়িত্বে আসার আগেই। তখন কিভাবে হয়েছে বলতে পারবো না। সমস্যাটি সমাধানে উর্ধতন কর্মকর্তাদের নজরদারি প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে, এবিষয়ে আশ্বাস্ত করছি। দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তৌহিদুল হাসান তুহিন বলেন, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া এজমাসহ ফুসফুসের নানা জটিলতা তৈরি করে। দৌলতপুরে এধরণের রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
কুষ্টিয়া জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানান, সকল ইট ভাটা মালিকদেরকে নোটিশ করা হয়েছে তারা যেন অবৈধভাবে বন উজার করে কাঠ দিয়ে ইট না পোড়ায়। তিনি বলেন ঢাকাতে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ম্যাজিষ্ট্রেট আসলেই ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
মিরপুর মশান এলাকার একেবি ভাটা মালিক এনামুল হক বলেন, প্লাইউড কারখানায় হাজার হাজার মন কাঠ লাগছে, সেখানে সরকারের কোন নজর দারী নেই। অথচ ইট ভাটায় কয়েক শ মন কাঠের প্রয়োজন হয় এ ক্ষেত্রে করা নজরদারী করা হচ্ছে। একই জায়গায় দুই আইন। এ বিষয়ে নজর রাখা দরকার।