ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও এক্স (সাবেক টুইটার) এর মালিক ইলন মাস্ক। ফোনে কথা বলার সময় মাস্কের পাশেই ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টার দিকে তাদের মধ্যে কথোপকথন হয়।
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তাদের আলোচনার বিষয়টি নির্ধারিত সময়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দিয়েছেন। এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করবেন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের (টুইটার) মালিক।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস অফিস বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আলাপকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ইলন মাস্ক স্টারলিংকের স্যাটেলাইট যোগাযোগের রূপান্তরমূলক প্রভাব, বিশেষ করে বাংলাদেশের উদ্যোগী যুবক, গ্রামীণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নারী এবং প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
উচ্চগতির ও স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ কীভাবে বাংলাদেশের ডিজিটাল বৈষম্য দূর করতে পারে, সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষমতায়ন এবং দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে জাতীয় সীমানার বাইরে প্রবেশাধিকার দেওয়ার উপায় নিয়ে এ সময় আলোচনা করা হয়।
ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের অবকাঠামোতে স্টারলিংকের কানেক্টিভিটি যুক্ত করা হলে লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনীতির সঙ্গে দেশকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে একীভূত করা হবে।
তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রযুক্তিচালিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনে মাস্কের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, স্টারলিংক গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ ফোনের একটি সম্প্রসারিত অংশ হতে পারে, যা গ্রামের নারী ও তরুণদের বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। তারা বৈশ্বিক উদ্যোক্তায় পরিণত হবে।
ইলন মাস্ক গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ মডেলের প্রশংসা করে দারিদ্র্য বিমোচনে এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা সম্পর্কে জানান।
ইলন মাস্ক বলেন, তিনি অনেক বছর ধরে গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণ পল্লী ফোনের উভয়ের কাজের সঙ্গে পরিচিত।
স্টারলিংকের মতো প্রযুক্তিগত অগ্রগতিকে কাজে লাগানো বাংলাদেশে উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে আরও ত্বরান্বিত করতে পারে বলে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস ব্যক্ত করেন।
ড. ইউনূস স্টারলিংক সেবার সম্ভাব্য চালুর জন্য ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং জাতীয় উন্নয়নে এই উদ্যোগের তাৎপর্য তুলে ধরেন, যার প্রতি মাস্ক ইতিবাচক সাড়া দেন। মাস্ক বলেন, ‘আমি এটির জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।’
এই সম্পৃক্ততা বাংলাদেশে উন্নত স্যাটেলাইট সংযোগ আনা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি এবং দেশজুড়ে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
উভয় পক্ষ এই উদ্যোগে দ্রুত অগ্রগতি আনতে সম্মত হয়েছে এবং হাই রিপ্রেজেন্টটটিভ খলিলুর রহমান, মিসেস ড্রায়ার এবং মি. গ্রিফিথসকে আরও কাজের সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইলন মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতাবিষয়ক বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দিয়েছেন। এই বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কাজ করবেন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ ধনী মাস্ক টেসলা, স্পেসএক্স ও এক্সের (টুইটার) মালিক।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে রয়েছেন। ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫ সম্মেলনে অংশ নিতে দুই দিনের সফরে সেখানে যান তিনি। গত ১২ ফেব্রুয়ারি দুবাই স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে দুবাই পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি দুবাইয়ে ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫ সম্মেলনে অংশ নিতে আমিরাতের উপ-রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক আমির শাইখ মুহাম্মাদ বিন রাশিদ আল মাখতুম প্রধান উপদেষ্টাকে একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠান।
এবারের সম্মেলন সরকারগুলোর মধ্যে কার্যকরী অংশীদারি ও বৈশ্বিক মতবিনিময় এবং সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার ও জনগণের মধ্যকার সেতুবন্ধ সৃষ্টিতে প্ল্যাটফরমটির উদ্যোগ অব্যাহত রাখবে। প্রধান উপদেষ্টার সম্মেলনে যোগদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে তার চিন্তা এবং বৈশ্বিক বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে।