ঢাকা: ই-কমার্সের নামে জনগণের ২৬৮ কোটি টাকা প্রতারণা ও অত্মসাতের অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের একটি টিম বিশেষ রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কলাবাগান এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেডের এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান, নির্বাহী অফিসার মো. জসীম, ম্যানেজার (হিসাব) মো. মানিক মিয়া, ম্যানেজার (প্রোডাক্টস), মো. তানভীর আহম্মেদ, সহকারি ম্যানেজার( প্রোডাক্টস) মো. পাভেল সরকার, ও অফিস সহকারি নাদিম মো. ইয়াসির উল্লাহ।
আজ মঙ্গলবার ৩ নভেম্বর ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার এ তথ্য জানান।
ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি ই-কমার্সের নামে লাইসেন্সবিহীন পিরামিড আকৃতির অনলাইনভিত্তিক মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পরিচালনা করে সাধারণ মানুষকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২৬ অক্টোবর রাজধানির কলাবাগান থানার এফ হক টাওয়ারে কোম্পানির অফিসে ডিবি (সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম) বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম প্রিভেনশন টীম অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ব্যাপারে কলাবাগান থানায় একটি মামলা করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে, সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে মূলহোতা আলামিন প্রধান ও মো. জসীমকে গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে, ১ টি হ্যারিয়ার গাড়ি, ২টি পিকাপ ভ্যান, সার্ভারে ব্যবহৃত ৬টি ল্যাপটপ, ২টি রাউটার, ২টি পাসপোর্ট ও বিভিন্ন কাগজপত্র জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য ও কোম্পানির সার্ভারের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায় এই কোম্পানি চলতি বছরের ১লা জানুয়ারি থেকে ই-কমার্সের লাইসেন্স নিয়ে যাত্রা শুরু করে। কোম্পানির এমডি ও সিইও আলামিন প্রধান একসময় ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডে সক্রিয় ছিলেন। ডেসটিনি বন্ধ হয়ে গেলে দীর্ঘদিন গবেষণা করে ডেসটিনির ব্যবসা পদ্ধতি অনুসরণ করে এই অনলাইনভিত্তিক প্রতারনা শুরু করা হয়। প্রতিষ্ঠানের প্রধান, ডিএমডি, ডিরেক্টর, অফিসার সম্মিলিতভাবে মাত্র ১০ মাস সময়ের মধ্যে সাধারণ মানুষের সরলতাকে পুঁজি করে উচ্চ কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে মোট ২২ লাখ ২৬ হাজার ৬৬৮ মেম্বার আইডি থেকে প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তিনি জানান, ব্যবসা কার্যক্রম অনলাইন এপিপি ভিত্তিক হওয়ায় বাংলাদেশের বাইরেও ১৭ টি দেশের বাংলাদেশি প্রবাসী ও বিদেশি প্রায় ৫ লাখ মেম্বার রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে, কোম্পানির এমডি আলামিন প্রধান ও কোম্পানির নামে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৫টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৮টি একাউন্ট রয়েছে বলে জানা যায়।
তারা মূলত কোম্পানির ওয়েভসাইট এসপিসি ওয়ার্ল্ড এক্সপ্রেস. কম, ফেসবুক পেজ, ইউটিউপে শত শত পোস্ট এর মাধ্যমে ই কমার্সের কথা বলে সাধারণ জনগণকে লোভনীয় কমিশনের লোভ দেখিয়ে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে। আগ্রহীদের একটি মোবাইল এপিপি ডাউনলোড করে এর মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। রেজিষ্ট্রেশন করার সময় বাধ্যতামূলক পূর্ববর্তী রেজিঃকৃত আপলিঙ্ক আইডির রেফারেন্সে কোম্পানি প্রদত্ত বিকাশ, নগদ ও রকেটের নাম্বারে এ্যাকাউন্টের প্রতিটি আইডির জন্য ১হাজার ২শ’ টাকা প্রদান করতে হয়। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরণের কমিশন যেমন (রেফার কমিশন, জেনারেশন কমিশন, রয়্যাল কমিশন) এর ইত্যাদি প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করা হয়।
পিরামিড আকৃতির রেফার কমিশন সম্পর্কে সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মীর মোদাছ্ছের হোসেন জানান, যে রেফার করবে সে তার নিচের ৩ টি আইডি থেকে ৪শ’ টাকা করে কমিশন লাভ করবে। তারপর ওই ৩ আইডি থেকে যখন ৩ গুণ ৩=৯ আইডি হবে তখন আপলিংকের আইডি শতকরা ২০ ভাগ কমিশন পাবে। তারপর তার ডাউনলিংকে যত আইডি হবে আপার আইডি শতকরা ১০ ভাগ হারে কমিশন পাবে। যা মূলত পিরামিড আকৃতির হয়ে থাকে। এ ধরনের ব্যবসা বাংলাদেশের আইনে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এমএলএম ব্যবসা আড়াল করার কৌশল সম্পর্কে সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান জানান, কোম্পানিটি নামে মাত্র কয়েকটি পন্য (এলোভেরা শ্যাম্পু, ফেইসওয়াশ, চাল, ডাল, মরিচের গুড়া ইত্যাদি) শুধুমাত্র তাদের রেজিস্টার্ড মেম্বারদের কাছে বিক্রি করে থাকে এবং তার লভ্যাংশ থেকে প্রতি আইডি হোল্ডারকে কোম্পানির বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখার বিনিময়ে ১০ টাকা করে প্রদান করার প্রতিশ্রতি দেয়।
-বাসস