বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
উত্তম কুমার! বাংলা সিনেমার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা তিনিই। সিনেমার পর্দায় তাঁর ম্যাজিক বাঙালি কোনদিনও ভুলবে না। কিন্তু শুধুমাত্র সিনেমার পর্দাতেই নয়। বাস্তব জীবনেও বহু নারীর জীবনে ম্যাজিশিয়ানের কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু সেই সব কাহিনী অজানাই।
এই ঘটনা লক্ষ্য করেও তাঁকে কোনওরকম ধমক দেননি উত্তম কুমার। শুটিং শেষে তাঁকে মেক-আপ রুমে ডাকেন তিনি। উত্তম কুমার ডেকেছেন! ভয় রীতিমতো কাঁপতে কাঁপতে যান কালী বাবু। কিন্তু এতটুকু রাগ না দেখিয়ে শান্ত গলায় উত্তম কুমার জিজ্ঞাসা করেন ‘কী রে, কিছু কী হয়েছে?’
এমন প্রশ্ন শুনে মহানায়কের সামনে কেঁদেই ফেলেন কালী। আবার উত্তম জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোকে আজ আনমনা মনে হল কালী, কী হয়েছে বল’
এর জবাবে কাঁদতে কাঁদতে কালী বাবু উত্তর দেন ‘আমার মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়েছে দাদা। সেই টাকা এখনও পর্যন্ত জোগাড় করতে পারিনি। সেই চিন্তা করতে গিয়ে ভুল হয়ে গেছে দাদা, আর কখনও ভুল হবে না।’সেদিনের মতো কালীর পিঠে হাত রেখে তাঁকে আশ্বস্ত করেন মহানায়ক। পরদিন কালীকে নিজের বাড়িতে ডেকে পাঠান। খামে করে বিয়ের পুরো খরচের টাকা কালীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন উত্তম কুমার।
দ্বিতীয় ঘটনা তাঁর সহকর্মী মণি শ্রীমানির মেয়ের বিয়ের কথাই ধরা যাক। চরিত্রাভিনেতা মণি-র মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কিন্তু বিয়েতে খরচ করার মতো পর্যাপ্ত টাকা তখন হাতে নেই অভিনেতার। এই ঘটনার কথা কানে পৌঁছালো ভাই তরুণ কুমারের। সঙ্গে সঙ্গে দাদাকে গিয়ে সমস্ত কথা জানালেন তরুণ। দুই ভাইয়ের মধ্যে পরামর্শ হল রাতভর।
কিন্তু সবাই মিলে টাকা তুলে মণির হাতে তুলে দিলে আত্মসম্মান আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে অভিনেতার। সেই কথা চিন্তা করে এক অনন্য সাধারণ প্রস্তাব দিলেন উত্তম কুমার। তিনি নিজে ,এবং আরও এক অসামান্য অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়-কে নিয়ে এক জমজমাট জলসার আয়োজন করলেন বিশ্বরূপা থিয়েটারে। সঙ্গে ছিলেন তরুন কুমারও। নিজে সমস্ত শিল্পীকে অনুরোধ করেছিলেন উত্তমকুমার। কোনও শিল্পী পারিশ্রমিক নেননি। জলসায় বিখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে নিয়েও গান গেয়েছিলেন উত্তমকুমার। তবলা সঙ্গতে ছিলেন অসিতবরণ। অনুষ্ঠান থেকে সংগৃহীত সমস্ত অর্থ সেদিন তুলে দেওয়া হয়েছিল মণি বাবু হাতে। মেয়ের বিয়ের খরচ সামাল দিতে এই অর্থ যথার্থই কাজে লেগেছিল তাঁর।
জানা যায়, উত্তমকুমারের বাসস্থান ভবানীপুরেদুর্গাপুজোর সময় একবার মণ্ডপে আগুন লেগে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ষষ্ঠীর আগের দিন। প্যান্ডেল থেকে প্রতিমা সবকিছুই আগুনের গ্রাসে ভষ্মিভূত হয়। যেখানে গোটা শহর পুজোয় মেতে সেখানে যেনও শ্মশানের নিস্তব্ধতা ভবানীপুরের পাড়ায়। কিন্তু ষষ্ঠীর সকালে ঘুম ভাঙতে যেন আকাশ থেকে পড়লেন পাড়ার বাসিন্দারা। নতুন প্যান্ডেল, ঠাকুর সবকিছু প্রস্তুত পুজোর জন্য। কে করল এই অসাধ্য সাধন?
বেশ কিছু বছর পর অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায় এর পিছনের রহস্য ফাঁস করেন। অনেক রাত করে শুটিং সেরে বাড়ি ফেরার পথে পথে এই দৃশ্য চোখে পড়ে মহানায়কের। তিনি গাড়ি থেকে নেমে সটান পাড়ায় বসে থাকা কয়েকজন ছেলের সামনে আসেন। এবং বলেন, তিনি সব ব্যবস্থা করে দেবেন এবং পুজোর জন্য যাবতীয় খরচ বহন করবেন। কিন্তু তাঁর সাহায্যের কথা যেনও পাঁচকান না হয়। এমনই ছিলেন উত্তম কুমার। নিজের আলোকে সদাই উজ্জ্বল ছিলেন এই ব্যক্তিত্ব। খ্যাতি, প্রাপ্তি বিতর্ক, অপমানের আড়ালে যেনও এক অন্য ব্যাক্তিত্ব। টলিপাড়ায় কান পাতলে তাঁর সাহায্যের এইরকম বিভিন্ন গল্প শোনা যায়। আর সেই জন্যই তো তিনি মহানায়ক।