একজন উদ্যোক্তা হওয়া সহজ কাজ নয়। এর জন্য এমন কিছু আচরন বা অভ্যাসের প্রয়োজন যার অধিকাংশ সাধারন মানুষের মাঝে দেখা যায় না, একইসাথে শৃঙ্খলা, আবেগ এবং আত্মোৎসর্গ থাকা প্রয়োজন যা অন্য অ-ব্যবসা মালিকদের মধ্যে থাকে না। প্রত্যেক উদ্যোক্তা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু এমন সাধারন কিছু আচরন আছে যা সকল উদ্যোক্তার মধ্যেই লক্ষ্য করা যায়। চলুন দেখি সে আচরনগুলো কি কি-
কর্ম পরিকল্পনা করুন
ব্যবসার ক্ষেত্রে, অন্যান্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার প্রদান করা জরুরী হতে পারে। ফোন কল, ইমেল, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, মিটিং এগুলোর যেন কোন শেষ নেই। এই কারনে উদ্যোক্তারা অগ্রিম তাদের সারাদিনের পরিকল্পনা করে নেন। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তারা পরিকল্পনা তৈরির সময় তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সময় বরাদ্দ করে।
নিজের শরীরের যত্ন নেয়া
একজন উদ্যোক্তা জানেন তার মানুষিক সুস্থতার পাশাপাশি শারীরিক সুস্থতা কতটা জরুরী। আপনি যদি একজন উদ্যোক্তা হন তাহলে আপনি জানেন যে শুধু বুদ্ধি আর সৃজনশীলতা দিয়ে বহুদূর যাওয়া যায় না, কঠি পরিশ্রমের শক্তি এবং ইচ্ছা থাকাটাও জরুরী। তাই একজন সফল উদ্যোক্তার আচরনে তার খাদ্য ও পুষ্টির প্রতি বিশেষ সচেতনতা লক্ষ্য করা যায়।
সকলকে সেবা প্রদানের জন্য প্রস্তুত থাকা
এখানেই একজন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। একজন ব্যবসায়ী কেবল তার মুনাফা লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু একজন উদ্যোক্তার আচরনে মুনাফা লাভের পাশাপাশী সেবা প্রদানের মানুষিকতাও পরিলক্ষিত হয়। কারন একজন উদ্যোক্তা জানে যে, শুধু মুয়াফা লাভের চিন্তা করলে টিকে থাকা কঠিন কিন্তু মুনাফার সাথে সেবা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে এক বিশেষ শ্রেনীর গ্রাহক আকর্ষণ করা সম্ভব।
নির্ধারিত লক্ষ্য ঠিক রাখা
প্রত্যেক উদ্যোক্তার একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকে। তারা সেই লক্ষ্য ধরে সামনে এগিয়ে যায়। শুধু যে সুস্পষ্ট লক্ষ্য থাকে তাই নয়, তাদের এই লক্ষ্যগুলো হয় দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী। তারা শুধুমাত্র দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যের উপর ফোকাস করে না। তারা জানে দীর্ঘমেয়াদী কোন লক্ষ্যে পৌছাতে হলে তাকে মধ্যমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী কিছু লক্ষ্য পুরনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।
ঝুঁকি গ্রহন করার আগে বিবেচনা করা
উদ্যোক্তাদের সম্পর্কে অনেকেই ধারনা করেন যে তারা যে ধরনের ঝুঁকি গ্রহন করে তা পাগলামির পর্যায়ে পড়ে। তবে প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে অন্যদের কাছে পাগলামি মনে হলেও যে ঝুঁকিগুলো একজন উদ্যোক্তা গ্রহন করে তা অনেক বিচার বিবেচনা করেই গ্রহন করে। আর তাকে এটা করতেই হবে কারন আপনি যদি এমন একজন ব্যাবসায়ী হন যিনি ঝুঁকি গ্রহনের আগে সম্ভব্য ফলাফলগুলো নিয়ে চিন্তা না করে ঝুঁকি নেন তাহলে আপই বেশীদিন টিকে থাকতে পারবেন না।
নিজের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞ্যান রাখা
এটি একজন উদ্যোক্তার অন্যতম আচরনগত বৈশিষ্ট্য। একজন উদ্যোক্তা খুব ভাল ভাবেই তাদের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে অবিহিত থাকেন এবং কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বে এই জ্ঞানটিকে কাজে লাগান।
দক্ষ একদল কর্মী নিযুক্ত করা
একজন উদ্যোক্তা জানেন তিনি নিজে সব কাজের জন্য সঠিক নন কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে সবদিক সঠিক হওয়ার জন্য দক্ষ জনবল দরকার। তাই তিনি সচেষ্ট থাকেন একদল দক্ষ কর্মী নিযুক্ত করতে। তারা চেষ্টা করেন সবচেয়ে ভালো কর্মীদের নিযুক্ত করতে।
ক্রমাগত শিখতে থাকা
একজন উদ্যোক্তা জানেন যে তার পক্ষে একবারে সবকিছু জেনে ফেলা সম্ভব না। ফলস্বরূপ, তারা শেখা বন্ধ করেন না। তাই কখনোই তারা নিজের এবং তাদের ব্যবসা, তাদের শিল্প এবং নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান আহরন বন্ধ করেন না। কারন সফল হতে চাইলে আপ টু ডেট থাকা অপরিহার্য।
সুযোগের সন্ধানে থাকা
যারা সত্যিকারের সফল উদ্যোক্তা তারা বর্তমানের সাফল্যের পর থেমে যান না। তারা জানেন যে জীবন পরিবর্তনশীল এবং ব্যবসার রূপও দ্রুতই পরিবর্তিত হয়ে যাবে। তাই তারা সর্বদা পরবর্তী সুযোগের খোজে থাকেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য নতুনত্ব খুব জরুরী এবং তারা সেটা করতে ব্যস্ত থাকে।
প্রতিদিন কর্ম এবং অগ্রাধিকারের মূল্যায়ন করা
সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে প্রতিদিন তারা তাদের ভবিষ্যত তৈরি করছে। এ কারণে তারা খুব কম দিনই তাদের কাজের পর্যালোচনা না করে থাকেন। আপনি যখন প্রতিটি দিনের শেষে আপনার সাফল্য পর্যালোচনা করবেন, আপনি সাফল্যের উদযাপনের পাশাপাশি ভুলগুলো নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন।
একজন উদ্যোক্তা হওয়া কোন সহজ কাজ নয়। উদ্যোক্তাদের যে সাধারন আচরনগুলোর কথা আলোচনা করা হল তা যে সবার মধ্যেই থাকবে তা নয়। তবে আপনি যদি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে সফল করতে চান এই গুনাবলী আপনার চরিত্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরী ।