ড. আহমেদ আবদুল্লাহ
আরব ও মধ্য এশিয়ার ঐশ্বর্যময় ইতিহাস নিয়ে এ দেশে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ইতিহাস চর্চাও তাদের এই ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত। মুসলমানদের এই ইতিহাস চর্চাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে।
প্রথম সময়কাল ৭১২-১১৯২ পর্যন্ত, দ্বিতীয় সময়কাল ১১৯২-১৫২৬ পর্যন্ত, তৃতীয় সময়কাল ১৫২৬-১৮৫৮ পর্যন্ত। প্রথম সময়কালে মােহাম্মদ বিন কাসেম হতে শুরু করে গজনির সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযানসহ তরাইনের যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে মাধ্যমে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা।
দ্বিতীয় সময়কালে সুলতানি আমলের ইতিহাস চর্চার ধারা ও প্রকৃতি। তৃতীয় সময়কালে মােগল শাসনের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে মােগল শাসনের অবসান পর্যন্ত ইতিহাস চর্চার গতি ও প্রকৃতি। আমরা এ পর্যায়ে কেবল দ্বিতীয় এবং তৃতীয় সময়কাল নিয়ে আমাদের সংক্ষিপ্ত আলােচনা সীমাবদ্ধ রাখব। এ পর্যায়ে দিল্লির সুলতানি পর্বের ইতিহাস পর্যালােচনা প্রসঙ্গে মামলুক ও খলজি শাসনামলের ইতিহাসবিদদের কথা প্রথমে বলে নেয়া যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে মিনহাজ সিরাজের তাবাকাত-ই-নাসিরি, হামানদ ঘানির তারিখ-ই- বং মােহাম্মদির কথা উল্লেখযােগ্য। তাবাকাত-ই-নাসিরি মিনহাজ সিরাজের অমর গ্রন্থ। ভারতীয় উপমহাদেশে স্থায়ীভাবে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ইতিহাস জানার জন্য এটি একটি আকর গ্রন্থ। বাংলা ও লাখনাবতী বিজয় সম্পর্কে মিনহাজ সিরাজের তাবাকাত-ই-নাসিরি একমাত্র প্রামাণ্য উৎস।
এরপর বলা যেতে পারে, সদরুল হাসান নিজামীর তাজুল মাসিবের কথা। ফারসি ভাষায় রচিত এ গ্রন্থটি ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভিক পর্যায় অবগত হওয়ার জন্য একটি আকর গ্রন্থ। এটি দিল্লি সালতানাতের প্রথম সরকারি ইতিহাস গ্রন্থ। এতে তরাইনের প্রথম যুদ্ধ ১১৯১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সুলতান ইলতুতমিশের সময়কাল ১২২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উপস্থাপিত হয়েছে। মােটকথা, ভারতে স্থায়ীভাবে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য তাজুল মাসিরের ভূমিকা কোনােভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এ প্রসঙ্গে আরাে কিছু ইতিহাস গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন ইয়াহিয়া বিন আহমদ সিরহিন্দির ‘তারিখ-ই-মুবারক শাহি’। এ গ্রন্থে মুহাম্মদ ঘুরির রাজত্বকাল থেকে শুরু করে সাইয়্যেদ বংশের সুলতান সাইয়্যেদ মুহাম্মদের রাজত্বকালের মধ্যভাগ পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে।
এ ছাড়া আরাে কিছু গ্রন্থ সেসময় রচিত হয় ।সেগুলাে হচ্ছে গজনির সুলতান মাহমুদের সম্মানে আল উতবির রচিত তারিখ-ই-ইয়েমনি, ৩০ খণ্ডে সমাপ্ত খাজা আবুল ফজল বিন হাসান আল বায়হাকির মুজান্নাদাত-ই-বায়হাকি, মাওলানা নুরুদ্দিন মুহাম্মদ আল আওফি রচিত জাওয়ামিউল হিকমাত ওয়া লাওয়ামি-উল-রিওয়ায়েত’, যা সুলতান ইলতুতমিশের মন্ত্রী নিজামুল মুলকের নামে উৎসর্গকৃত, আমির খসরু রচিত তারিখ-ই-আলায়ি বা খাজাউন উল-ফতুহ’, শামস-ই সিরাজ আফিফের তারিখ-ই-ফিরােজশাহী, অজ্ঞাত এক লেখকের “সিরাত-ই-ফিরােজশাহী উল্লেখযােগ্য।
-লেখক ড. আহমেদ আবদুল্লাহ, জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারি পরিচালক।